শুল্ক বাতিল: ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় বড় আঘাত!

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে বড় ধাক্কা, ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কি ভেস্তে যাবে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আদালতের সাম্প্রতিক রায়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু বাণিজ্য শুল্ক আরোপের ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। এই রায়ের ফলে ট্রাম্পের পুরো অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তের কারণে শুল্ক, সরকারি ব্যয় হ্রাস এবং কর হ্রাসের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাম্পের অর্থনৈতিক স্তম্ভ দুর্বল হয়ে পড়েছে।

বুধবারের ওই রায়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত ট্রাম্পের জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে আরোপিত শুল্কগুলো আটকে দেয়। এর মধ্যে ছিল ‘মুক্তি দিবস’ উপলক্ষে আরোপিত শুল্ক, ১০ শতাংশ হারে সবার জন্য প্রযোজ্য শুল্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রে ফেনটানিল প্রবেশে বাধা দেওয়ার জন্য নেওয়া পদক্ষেপগুলো। এই রায়ের ফলে ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির মূল ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে, যা তার অর্থনৈতিক পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ছিল।

ঐতিহাসিক শুল্ক আরোপের মাধ্যমে ডজনখানেক মার্কিন বাণিজ্য সহযোগী দেশকে আলোচনার টেবিলে এনেছিলেন ট্রাম্প। ধারণা করা হয়, এর মাধ্যমে বিদেশি বাজারগুলো মার্কিন পণ্যের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে, যা মার্কিন প্রস্তুতকারক ও কৃষকদের জন্য লাভজনক হবে।

এদিকে, ট্রাম্পের শুল্ক থেকে পাওয়া রাজস্ব তার এবং রিপাবলিকানদের বিশাল কর হ্রাসের অর্থায়নে সহায়তা করতে পারতো। এর ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়তো এবং বাজারের স্থিতিশীলতা আসতো। তবে আদালতের এই রায়ের কারণে এখন সেই সম্ভাবনা কমে গেছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সমর্থন, সক্ষমতা এবং দৃঢ়তার অভাব রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন, আইনি লড়াই এবং বিভিন্ন দলের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যাচ্ছে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে, শুল্ক থেকে বছরে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনাও কমে গেছে। যার ফলে, সিনেটের মাধ্যমে হাউস অনুমোদিত বিলটি এগিয়ে নিতে ট্রাম্প এবং রিপাবলিকানদের হয় কর কমানোর পরিমাণ কমাতে হবে, না হয় সরকারি ব্যয় আরো কমাতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে অনেক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। আপিলের ফল কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায় ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া এবং কংগ্রেসের কর প্যাকেজের ওপর প্রভাব ফেলবে।

এই আপিলের কারণে বিদেশি অংশীদারদের সঙ্গে ট্রাম্পের কাঙ্ক্ষিত বাণিজ্য চুক্তিগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরকার যুক্তরাজ্য এবং চীনের সঙ্গে চুক্তির কাঠামো ঘোষণা করেছে, তবে বাণিজ্য আলোচনা স্থবির হয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে আদালতের এই রায়।

তবে, এই ধাক্কা সাময়িক হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, প্রশাসন বিকল্প পথে শুল্ক আরোপের চেষ্টা করতে পারে। এক্ষেত্রে তারা বাণিজ্য সম্প্রসারণ আইনের ২৩২ ধারা ব্যবহার করতে পারে। এই ধারার অধীনে, ট্রাম্প ইতিমধ্যে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, গাড়ি এবং যন্ত্রাংশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন।

বিষয়টি এখনো শেষ হয়নি। ভবিষ্যতে কী হবে, তা সময় বলবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *