রেকর্ড বাজারেও ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে কেন এত ভয়?

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি: আপাতদৃষ্টিতে স্থিতিশীল, কিন্তু বাণিজ্য নীতি নিয়ে সতর্কবার্তা।

বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যখন কিছুটা শান্ত, তখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁদের আশঙ্কা, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতিগুলি আপাতদৃষ্টিতে ভালো দেখালেও, এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব মারাত্মক হতে পারে।

শেয়ার বাজার বর্তমানে ঊর্ধ্বমুখী, বেকারত্বের হারও নিম্নগামী। এমনকি মূল্যস্ফীতিও ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের আগের চেয়ে কম। এমন পরিস্থিতিতে, অনেকেই মনে করছেন, শুল্ক বৃদ্ধি এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে কঠিন বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য হোয়াইট হাউস আরও বেশি আগ্রাসী হতে পারে।

তবে অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করেন, এই ইতিবাচক দিকগুলো একটি বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাঁদের মতে, অর্থনীতির এই স্থিতিশীলতা ট্রাম্প প্রশাসনকে আত্মতুষ্টিতে ভুগতে বাধ্য করতে পারে, যা বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেবে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা দীর্ঘায়িত হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্কের প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে বোঝা যায় না। কোনো শুল্ক ঘোষণা করার পর তার ফল ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এর কারণ, ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই এই শুল্কের বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছিলেন এবং তাঁরা সেই অনুযায়ী পণ্য আমদানি করে রেখেছিলেন। ফলে, বাজারে হয়তো প্রথমে দাম তেমন বাড়েনি।

তবে এখন উদ্বেগের বিষয় হলো, এই মজুত ফুরিয়ে গেলে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে শুরু করবে। ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলও বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, শুল্কের কারণে কিছু পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যেমন— ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট, খেলনা, ইত্যাদি।

অর্থনীতিবিদ মেরি লাভেলি মনে করেন, “পরিস্থিতি এখন অনুকূলে দেখা গেলেও, এই চাপ বেশি দিন ধরে রাখা সম্ভব নয়। শুল্কের কারণে মূল্যবৃদ্ধি ঘটবেই।”

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী বিনিয়োগ করতে দ্বিধা বোধ করছেন। কারণ, তাঁদের মনে হচ্ছে, নীতি পরিবর্তনের ফলে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, বাণিজ্য চুক্তিগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা উচিত, যাতে ব্যবসায়ীরা একটি স্থিতিশীল পরিবেশ পান এবং তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে সুবিধা হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ব অর্থনীতির ওপর মার্কিন বাণিজ্য নীতির প্রভাব অনেক। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সঙ্গে অন্যান্য দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিবর্তন এলে, তার প্রভাব বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানো হলে, সেই পণ্যের আমদানি খরচ বেড়ে যাবে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।

অতএব, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি নিয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কারণ, এর ফলস্বরূপ বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে, যা বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *