আন্তর্জাতিক বাজারে শুল্কের খাড়ার ঘা, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী প্রভাব?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া বাণিজ্য শুল্কের সিদ্ধান্তের জেরে বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন দেখা যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন দেশের শেয়ার সূচকগুলো কয়েক দিনের ব্যবধানে উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা আসার আশঙ্কা আরও বাড়ছে। ট্রাম্প অবশ্য তাঁর এই পদক্ষেপকে ‘ওষুধের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাইওয়ান, হংকং, জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার শেয়ারবাজার। গত সোমবার তাইওয়ানের টিএআইইএক্স এবং হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক প্রায় ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ৯ শতাংশের কাছাকাছি হ্রাস পেয়েছে। সিঙ্গাপুরের স্ট্রেইটস টাইমস ইনডেক্স ৭ শতাংশের বেশি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পি ৫ শতাংশের বেশি কমেছে।
অস্ট্রেলিয়ার এএসএক্স ২০০-ও প্রায় ৬ শতাংশ দর হারিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রও এই ধাক্কা থেকে রেহাই পায়নি। গত সপ্তাহে দেশটির শেয়ারবাজারে প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে।
বাজারে আরও দরপতনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মূল কারণ হলো বাণিজ্য যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশের ওপর ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এর মধ্যে চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোও রয়েছে।
চীন এরই মধ্যে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এছাড়া, কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের রপ্তানিও তারা সীমিত করেছে।
ইইউও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দা আসার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই আশঙ্কা প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর এর প্রভাব অনুভূত হতে পারে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য অংশীদার।
এছাড়া, বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট অবশ্য বলেছেন, মন্দা আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাঁর মতে, সরকার দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত করার চেষ্টা করছে।
তবে বাজারের এই অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে কত সময় লাগবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা