ভয়ংকর বাণিজ্য যুদ্ধ: দুঃসংবাদ আসছে!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি : আসন্ন অর্থনৈতিক ঝড়ের পূর্বাভাস?

সাম্প্রতিক সময়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষ করে চীনের উপর আরোপিত শুল্কের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এর প্রত্যক্ষ প্রভাব এখনই অনুভূত হচ্ছে না, তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, খুব শীঘ্রই এর ফলস্বরূপ বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।

এর ঢেউ লাগবে বিশ্ব অর্থনীতির প্রতিটি কোণে, যার প্রভাব থেকে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশও মুক্ত থাকবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া শুল্ক নীতির ফলস্বরূপ বাজারে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। শেয়ার বাজারে দর পতন, বিনিয়োগকারীদের সোনা ক্রয়ে আগ্রহ এবং বন্ডের সুদের হারে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। যদিও আপাতদৃষ্টিতে এর প্রভাব তেমন বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু পরিস্থিতি ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে।

বর্তমানে, এই বাণিজ্য যুদ্ধের দুটি প্রধান ধাক্কা অনুভূত হচ্ছে। প্রথমটি হলো বিভিন্ন বিদেশি পণ্যের উপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ এবং দ্বিতীয়টি, এই শুল্ক নীতি নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা। ফেডারেল রিজার্ভের একটি প্রতিবেদনেও ব্যবসার ক্ষেত্রে এই অনিশ্চয়তার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন, যা বাজারের জন্য ভালো লক্ষণ নয়।

এই শুল্কের সরাসরি প্রভাব ইতিমধ্যে কিছু মার্কিন ব্যবসায়ীর উপর পড়তে শুরু করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ‘বিজি বেবি’ নামক একটি ছোট ব্যবসা, যারা শিশুদের খেলনা তৈরি করে, তাদের কথা বলা যায়। চীনের প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে তারা একটি বড় অর্ডার দিলেও, শুল্কের কারণে সেই পণ্যগুলো এখনো গুদামেই রয়ে গেছে।

এই পরিস্থিতিতে তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শুল্ক বহাল থাকলে ব্যবসায়ীদের সামনে তিনটি পথ খোলা থাকবে: হয় তাদের লোকসান স্বীকার করতে হবে, না হয় পণ্যের দাম বাড়াতে হবে অথবা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে। এর ফলস্বরূপ, ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম বাড়তে পারে এবং বাজারে জিনিসপত্রের সরবরাহ কমে যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশে পৌঁছানোর কথা ছিল, কিন্তু ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে তা বেড়ে ৩ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।

অর্থনৈতিক এই ধাক্কা সবার উপর সমানভাবে লাগবে না। ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাই এর প্রাথমিক শিকার হবেন। ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য নানা চেষ্টা করছেন, তবে পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে নাও থাকতে পারে।

বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস এবং লং বিচ বন্দরে জাহাজের আগমন বাড়ছে। কিন্তু খুব শীঘ্রই এই সংখ্যা স্বাভাবিক হয়ে আসবে এবং আমদানিও হ্রাস পাবে। এর ফলে, ভোক্তারা দোকানে পণ্যের অভাব অনুভব করতে পারেন।

যদিও ট্রাম্প প্রশাসন চীনকে কিছুটা ছাড় দিতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে, তবে বর্তমানে বিদ্যমান ১০ শতাংশ শুল্ক নিয়েও আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই শুল্কের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি উন্নয়নের বদলে আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। তাই, বিশ্ব অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য সতর্ক থাকা এবং সম্ভাব্য অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকা অপরিহার্য।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *