আতঙ্কে বিশ্ব: ট্রাম্পের শুল্কে ডুবছে অর্থনীতি, বলছে ওईসিडी!

ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত বাণিজ্য শুল্ক বিশ্ব অর্থনীতির জন্য গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)-এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ওইসিডি’র মতে, এই শুল্কের কারণে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এর ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, যা বিনিয়োগের পথে বাধা সৃষ্টি করছে এবং ভোক্তাদের ব্যয় কমিয়ে দিচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে উচ্চ হারে আমদানি শুল্কের কারণে আমেরিকার প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোও পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে ব্যবসার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে।

শুল্কের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ভোক্তাদের মধ্যে আস্থা কমে যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে তাদের ব্যয়ের ওপর।

ওইসিডি’র পূর্বাভাস অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ২০২৩ সালের ২.৮ শতাংশ থেকে কমে ২০২৫ সালে ২.২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ১.৬ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। যেখানে গত বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ছিল ৩.২ শতাংশ, সেখানে এ বছর তা কমে ৩.১ শতাংশ এবং আগামী বছর ৩ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতিও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ২.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৫ সালে ২.৮ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ২.৬ শতাংশে পৌঁছতে পারে।

প্রতিবেদনে কানাডা ও মেক্সিকোর অর্থনীতির ওপর শুল্কের মারাত্মক প্রভাবের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প সরকার তাদের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে, যা এই দুটি দেশের অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

ওইসিডি’র মতে, কানাডার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এ বছর মাত্র ০.৭ শতাংশ হতে পারে, যেখানে ডিসেম্বরের প্রতিবেদনে ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। মেক্সিকোর অর্থনীতিতে ২০২৩ সালে ১.৩ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ০.৬ শতাংশ সংকোচন হতে পারে।

তবে চীনের অর্থনীতি ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রভাব থেকে তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে থাকবে বলে ওইসিডি মনে করে। চীন সরকার অভ্যন্তরীণ ব্যয় বাড়াতে একটি বিশেষ কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যা শুল্কের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা করবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক দেশ সুদের হার কমালেও, ওইসিডি মনে করে, শুল্কের কারণে মূল্যস্ফীতি আবারও বাড়তে পারে, ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে সুদের হার বেশি রাখতে হতে পারে, যা ব্যবসা ও ভোক্তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি করবে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়বে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে বিশ্ব অর্থনীতির এই মন্দা পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *