ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি: রায় কি তাঁর বিপক্ষে?

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ক্ষমতা নিয়ে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে চলছে চূড়ান্ত শুনানী। এই মামলার রায় শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনে নয়, বরং অর্থনীতিতেও ফেলতে পারে সুদূরপ্রসারী প্রভাব।

ট্রাম্পের সময়ে আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কতটা বৈধ, তাই এখন প্রধান বিচার্য বিষয়।

আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী, শুল্ক আরোপের ক্ষমতা মূলত কংগ্রেসের হাতে। কিন্তু ট্রাম্প তাঁর বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে এই কাজটি করতে চেয়েছিলেন।

তিনি ১৯৭৭ সালের আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইনের (International Emergency Economic Powers Act) অধীনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে শুল্ক আরোপ করেন। তাঁর যুক্তি ছিল, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে মানুষ ও মাদক প্রবেশ একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা, এবং এর মোকাবিলায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একই যুক্তিতে তিনি চীন, কানাডার উপরেও শুল্ক আরোপ করেন।

এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়। নিম্ন আদালতগুলো ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে অবৈধ ঘোষণা করে। তাদের মতে, জরুরি অবস্থার ক্ষমতা ব্যবহার করে শুল্ক আরোপ করার সুযোগ নেই। এখন সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

এই কোর্টে ট্রাম্পের নিয়োগ দেওয়া তিনজন বিচারপতি রয়েছেন, এবং তাঁদের অবস্থান সাধারণত প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার পক্ষে দেখা যায়।

শুল্ক আসলে কী? শুল্ক হলো আমদানি করা পণ্যের ওপর ধার্য করা কর। এই করের বোঝা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপর গিয়ে পড়ে।

ট্রাম্পের আমলে এই শুল্ক থেকে প্রায় ১৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আয় হয়েছে। এই মামলায় যদি ট্রাম্পের বিপক্ষে রায় আসে, তাহলে তাঁর অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।

আদালতে শুনানিতে ‘মেজর কোয়েশ্চন’ নামের একটি আইনি নীতির প্রসঙ্গ এসেছে। এই নীতি অনুযায়ী, কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কংগ্রেসকে সুস্পষ্টভাবে তাদের অবস্থান জানাতে হয়।

অতীতে এই নীতির ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট বাইডেন প্রশাসনের কিছু নীতি বাতিল করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, করোনাভাইরাস মহামারীর সময় শ্রমিকদের উচ্ছেদ বন্ধের সিদ্ধান্ত এবং শিক্ষার্থীদের ঋণ মওকুফের মতো বিষয়গুলোও এই নীতির কারণে বাতিল হয়েছিল।

শুল্ক সংক্রান্ত মামলার গুরুত্ব অনেক বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, এই মামলার রায়ের ফলে আগামী ১০ বছরে প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি রাজস্বের বিষয় জড়িত। মামলাকারীরা যুক্তি দেখাচ্ছেন যে, ট্রাম্পের নিয়োগ করা বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেট, নীল গোরসাচ ও ব্রেট কাভানাফ এই বিষয়ে তাঁদের পূর্ববর্তী মন্তব্যে শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তবে, বিচারপতি কাভানাফ মনে করেন, পররাষ্ট্রনীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়ে একই ধরনের সীমাবদ্ধতা প্রয়োগ করা উচিত নয়। শুনানির সময়, কংগ্রেস কিভাবে প্রেসিডেন্টের হাতে জরুরি ক্ষমতা দিয়েছে, সেই বিষয়টিও আলোচনায় আসে।

আদালত দ্রুত এই মামলার রায় দিতে পারে। সাধারণত, সুপ্রিম কোর্টের গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় দিতে ছয় মাস বা তার বেশি সময় লাগে। কিন্তু এই মামলার শুনানির দ্রুততা দেখে মনে হচ্ছে, আদালত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে।

সম্প্রতি, টিকটক (TikTok) মামলার রায় এক সপ্তাহের মধ্যেই দিয়েছিল আদালত।

এই মামলার রায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরও কিছু প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্কে পরিবর্তন আসতে পারে। তাই, এই মামলার দিকে এখন সবারই নজর রয়েছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *