ভয়াবহ! ট্রাম্পের শুল্কনীতি বাতিল করতে পারে আদালত, তবে আসল সমস্যা কি?

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি নিয়ে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা চলছে। ট্রাম্পের আমলে বিভিন্ন পণ্যের ওপর যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল, তা নিয়েই মূলত এই বিতর্কের সূত্রপাত।

অনেকের ধারণা, এই শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক বৃদ্ধির পেছনে আরও অনেক কারণ রয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়েও খুব বেশি পরিবর্তন নাও আসতে পারে।

এই মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিশেষ করে, চীনের পণ্য, ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর প্রতি প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ এবং ভারতকে রাশিয়ার তেল ত্যাগ করতে চাপ প্রয়োগের মতো ঘটনাগুলো নিয়ে তাঁদের উদ্বেগ রয়েছে।

ট্রাম্প বিভিন্ন সময়ে এমন সব শুল্ক আরোপ করেছেন, যা নজিরবিহীন।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, দেশটির নাগরিকদের মধ্যে ৭২ শতাংশ মনে করেন দেশের অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় রয়েছে।

৬১ শতাংশ মনে করেন, ট্রাম্পের নীতিমালার কারণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, শুল্ক বৃদ্ধির কারণে জিনিসপত্রের দাম সামান্য বাড়লেও, মূল্যবৃদ্ধির পেছনে অন্যান্য কারণগুলোই বেশি প্রভাবশালী।

উদাহরণস্বরূপ, জুতা ও আসবাবপত্রের মতো কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে, যেগুলোর প্রায় সবই আমদানি করা হয়। কিন্তু সামগ্রিকভাবে মূল্যবৃদ্ধির হার ততটা উদ্বেগজনক নয়।

গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৩ শতাংশ, যা জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। তবে কোভিড-পরবর্তী সময়ে এটি ৯ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্কের প্রভাব সীমিত হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী শুল্কের প্রায় ৮০ শতাংশ খরচ নিজেরাই বহন করছেন।

এর ফলে কোম্পানির মুনাফায় আঘাত লাগছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চাকরির বাজার কিছুটা ধীর হয়ে গেছে। তবে ভবিষ্যতে ভোক্তাদের ওপরও এই শুল্কের বোঝা চাপতে পারে।

এমনও হতে পারে, ব্যবসায়ীরা তাঁদের পণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদ মাইকেল হ্যানসন মনে করেন, ভোক্তাদের শেষ পর্যন্ত শুল্কের পুরো বিল পরিশোধ করতে হতে পারে। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মূল কারণ শুল্ক নয়।

গত কয়েক বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়েছে, যার প্রধান কারণ বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি। বর্তমানে একটি পরিবারের মাসিক খরচ ২০২১ সালের শুরুর তুলনায় ১,০৪৩ ডলার বেশি হচ্ছে।

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। যদিও এখন মূল্যস্ফীতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে, তবুও মানুষের মনে দাম বাড়ার প্রভাব এখনো কাটেনি।

সাধারণত, জিনিসপত্রের দাম ধীরে ধীরে বাড়ে, যা সহজে বোঝা যায় না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যবৃদ্ধির হার অনেক বেশি ছিল।

সুপ্রিম কোর্ট যদি ট্রাম্পের শুল্ক নীতিকে অবৈধ ঘোষণা করে, তাহলেও খুব বেশি স্বস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, ট্রাম্পের হাতে শুল্ক আরোপের অন্যান্য সুযোগ রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, ১৯৬২ সালের বাণিজ্য সম্প্রসারণ আইনের ২৩২ ধারা অনুযায়ী, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে প্রেসিডেন্ট শুল্ক বাড়াতে পারেন। ট্রাম্প এর আগে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং তামার ওপর শুল্ক বাড়াতে এটি ব্যবহার করেছিলেন।

১৯৭৪ সালের বাণিজ্য আইনের ৩০১ ধারা অনুযায়ী, কোনো দেশ যদি বাণিজ্য চুক্তি লঙ্ঘন করে, তাহলে তার ওপর শুল্ক আরোপ করা যেতে পারে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মামলাটিকে ‘জীবন-মরণের’ লড়াই হিসেবে অভিহিত করেছেন। তবে, জেপি মরগান চেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেমি ডিমন সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তবে মার্কিন অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব চূড়ান্ত নাও হতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *