শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের ক্ষমতা: সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে কী হবে?

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে শুল্ক ব্যবহারের পদ্ধতি নিয়ে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা চলছে। ট্রাম্প সরকার বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক আরোপকে পররাষ্ট্রনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন, যা নজিরবিহীন।

এই পদক্ষেপের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া মামলার রায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে।

শুল্ক মূলত একটি দেশের আমদানি পণ্যের ওপর ধার্য করা কর। সাধারণত, এটি বাণিজ্য সুরক্ষার উদ্দেশ্যে অথবা কোনো দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ব্যবহার করা হয়।

তবে ট্রাম্প প্রশাসন এই শুল্ককে ভিন্নভাবে কাজে লাগিয়েছে। বিভিন্ন দেশের উপর চাপ সৃষ্টি, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল এবং এমনকি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কারণেও শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, কোনো দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক মতবিরোধ হলে, অথবা কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ নীতি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী হলে, সেই দেশের উপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

ট্রাম্প সরকারের এই নীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাঁর সময়ে শুল্ককে কেবল অর্থনৈতিক বিষয় হিসেবে না দেখে, বরং পররাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

এর ফলে অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতির কারণে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছে, আবার কেউবা চীনের দিকে ঝুঁকছে, যারা মুক্ত বাণিজ্যের সমর্থক হিসেবে নিজেদের তুলে ধরছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি চলছে। আদালত যদি ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ক্ষমতাকে সীমিত করে, তবে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব দেখা যেতে পারে।

এমন হলে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বে করা বাণিজ্য চুক্তিগুলো নতুন করে আলোচনা করার প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া, বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তনের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই ধরনের শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান শুল্কের বোঝা ভোক্তাদের উপর চাপিয়েছে, যার ফলে পণ্যের দাম বেড়েছে।

আদালতের রায়ের পর, ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো অন্য কোনো আইনের আশ্রয় নিয়ে শুল্ক আরোপের চেষ্টা করতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি আরো জটিল হতে পারে।

এই মামলার রায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। এই রায়ের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *