৬ ট্রিলিয়ন ডলারের শুল্ক: ট্রাম্পের চাঞ্চল্যকর ঘোষণা!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্ক নীতির ফলে আগামী এক দশকে প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন ডলার রাজস্ব আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা পিটার নাভারো এমনটাই জানিয়েছেন।

এই বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কর বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।

নাভারোর মতে, এটি আসলে কর বৃদ্ধি নয়, বরং কর হ্রাসের শামিল। তিনি মনে করেন, এই শুল্কের বোঝা মার্কিন ভোক্তাদের উপর পড়বে না, বরং তা বহন করবে বিদেশি ব্যবসায়ীরা অথবা সংশ্লিষ্ট দেশগুলো।

তবে, অনেক অর্থনীতিবিদ এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন। তাদের ধারণা, শুল্কের কারণে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়বে এবং এর ফলস্বরূপ মার্কিন ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদেরই বেশি খরচ করতে হবে।

ট্রাম্প প্রশাসন এরই মধ্যে চীন, মেক্সিকো এবং কানাডা থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করেছে। এছাড়া, চলতি সপ্তাহ থেকে সব ধরনের আমদানি করা গাড়ির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে যাচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অন্যান্য দেশ থেকে আসা বিভিন্ন পণ্যের উপরও শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন, যা তিনি “মুক্তি দিবস” হিসেবে অভিহিত করেছেন।

নাভারো জানিয়েছেন, এই শুল্ক আদায়ের অর্থ দিয়ে পরে কংগ্রেসের মাধ্যমে কর কমানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যদিও এই বিপুল পরিমাণ শুল্ক আদায় হলে তা স্বল্প মেয়াদে আমেরিকানদের জন্য একটি বড় ধরনের কর বৃদ্ধিই হবে।

নাভারোর হিসাব অনুযায়ী, শুধু গাড়ির বাইরের অন্যান্য পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করে বছরে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব পাওয়া যেতে পারে, যা ১০ বছরে ৬ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে।

তবে, এই হিসাব কীভাবে করা হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এছাড়া, শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়লে, আমেরিকানরা আগের মতো সেই সব পণ্য কিনবে কিনা, তা বলা কঠিন।

যদি নাভারোর হিসাব সত্যি হয়, তবে এই নতুন শুল্ক সংগ্রহ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন কর বৃদ্ধি হিসেবে চিহ্নিত হবে।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ সালে নেওয়া কর বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি হারে কর বেড়েছিল। সেই সময়কার কর বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল জিডিপি-র প্রায় ৫ শতাংশ।

যদিও সেই সময়ে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রাজস্ব আদায় করা হয়েছিল, যা মুদ্রাস্ফীতি সমন্বিত করে আজকের দিনে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলারের সমান।

অন্যদিকে, ২০০৯ সালে প্রণীত “অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট” বা “ওবামাকেয়ার”-এর মাধ্যমে কর রাজস্ব ৪৮৬ বিলিয়ন ডলার বাড়াতে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। যদিও এটিও ১০ বছরের জন্য হিসাব করা হয়েছিল।

সেই তুলনায়, ট্রাম্পের শুল্কনীতি এক বছরেই ৬০০ বিলিয়ন ডলার আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই শুল্ক নীতির কড়া সমালোচনা করে সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার বলেছেন, এই পদক্ষেপ আমেরিকানদের জন্য বিশাল খরচ বাড়াবে এবং অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

তার মতে, এই শুল্ক আদায়ের ফলে প্রায় ৭০০ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত কর দিতে হবে, যা জনগণের ওপর সরাসরি বোঝা চাপাবে।

গাড়ি শিল্পের উপর শুল্ক আরোপের বিষয়ে নাভারো জানিয়েছেন, শুধু গাড়ির শুল্ক থেকেই প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আসবে।

যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের পরিবর্তন আনতে বেশ কয়েক বছর লেগে যেতে পারে এবং এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অটো শিল্পের কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *