যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি: ব্রিটেনের সঙ্গে ‘সমঝোতা’, চীনকে নিয়ে শঙ্কা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। তবে একে সম্পূর্ণ চুক্তি না বলে সমঝোতার একটি কাঠামো বলাই ভালো। এই কাঠামো অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে আগামী কয়েক মাস বা বছর ধরে আলোচনা চলবে। আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে একটি বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে, যা হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিদ্যমান বাণিজ্য পরিস্থিতি থেকে বেশি লাভজনক হবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার বৃহস্পতিবার এক প্রশ্নের জবাবে জানান, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ আগের চেয়ে ভালো। যদিও চুক্তির বিস্তারিত এখনো অজানা, তবে কিছু ব্রিটিশ পণ্যের ওপর শুল্ক কমবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আরও কিছু পণ্যের বাজার খুলতে পারে।
তবে, এই সাফল্যের পরেও ট্রাম্পের সামনে আরও ১৯০টির বেশি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আগামী ৮ জুলাইয়ের মধ্যে এই চুক্তিগুলো সম্পন্ন করতে হবে, কারণ এরপর অনেক দেশের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা আসতে পারে। ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, তিনি এরই মধ্যে ২০০টি বাণিজ্য চুক্তি করেছেন।
বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সময় লাগে, এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে এটি মোটেও সুখকর ইঙ্গিত দেয় না। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তিক্ততা চলছে, যার ফলস্বরূপ অনেক পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চীনের দিক থেকেও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে, আমেরিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদারের সঙ্গে বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
বর্তমানে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জেনেভায় বৈঠকে মিলিত হয়ে বাণিজ্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার কথা রয়েছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, তাঁরা একটি চুক্তিতে পৌঁছতে পারবেন, এমন সম্ভাবনা কম। বরং, তিনি ‘ উত্তেজনা কমানোর’ প্রত্যাশা করছেন। অন্যদিকে, ট্রাম্প জানিয়েছেন, আলোচনার আগে তিনি চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক কমাবেন না।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী বাণিজ্য নীতির কারণে দেশটির আমদানি শুল্কের হার ২২ শতাংশের বেশি, যা উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এর ফলে, মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। এমনকি, গত কয়েক বছরে প্রথমবারের মতো দেশটির জিডিপি সংকুচিত হয়েছে।
বাস্তব চুক্তি পেতে সময় লাগে এবং এর জন্য জটিল আলোচনার প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন পণ্যের শুল্ক এবং শুল্ক-বহির্ভূত বাধাগুলো নিয়েও আলোচনা করতে হয়। এছাড়া, বিভিন্ন পক্ষের স্বার্থ রক্ষার জন্য রাজনৈতিক বিষয়গুলোও বিবেচনায় নিতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকটি তাৎক্ষণিকভাবে শুল্ক কমাতে সাহায্য করতে পারে, তবে এটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সুবিধা দেবে কিনা, তা সময়সাপেক্ষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য চুক্তি করতে মাস বা বছর লেগে যেতে পারে।
চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না হলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে।
চীনের জাহাজীকরণ এপ্রিল মাসে ৬০ শতাংশ কমেছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, এই বছর চীনের থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। এর ফলে, ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি, সরবরাহ সংকট এবং দোকানের তাকগুলো খালি হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক ‘টেকসই’ নয়। এই শুল্ক কমাতে হবে, বাণিজ্য পুনরায় শুরু করতে হলে তা অর্ধেক এর বেশি কমাতে হবে। এমনকি, বাণিজ্য স্বাভাবিক হতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে পারে। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে, যা বাংলাদেশের বাজারেও বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়াতে পারে। এছাড়াও, এই ধরনের বাণিজ্য নীতির কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি এবং রেমিট্যান্সের ওপরও প্রভাব পড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন