৯0 দিনে ১৫০ চুক্তি! ট্রাম্পের বাজি, বাজার কি শুনছে?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি: বিশ্ববাজারে অস্থিরতা, বাংলাদেশের জন্য কী বার্তা?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি ঘিরে বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। তাঁর প্রশাসন স্বল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে একাধিক বাণিজ্য চুক্তি করার ঘোষণা দিলেও, বাজারের উপর এর প্রভাব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে প্রায় ১৫০টি দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে, এই সিদ্ধান্তের জেরে বিশ্ব অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে দেখা যাচ্ছে অস্থিরতা।

শেয়ার বাজারগুলোতে ইতোমধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গত কয়েকদিনে শেয়ারের দাম ওঠা-নামা করছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

ডাউ জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ-এর মতো সূচকে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। কয়েকদিন আগেও যেখানে সূচক ঊর্ধ্বমুখী ছিল, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির ঘোষণার পর তা নিম্নগামী হতে শুরু করে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, বাজারের এই অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার অভাবের কারণে হচ্ছে।

শুধু শেয়ার বাজার নয়, বন্ড মার্কেট এবং তেলের বাজারেও দেখা যাচ্ছে প্রতিকূল পরিস্থিতি। সাধারণত, অস্থিরতার সময় বন্ডের দাম বাড়ে, কারণ বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকে।

কিন্তু বর্তমানে বন্ডের দাম কমছে, যা বাজারের দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে, তেলের দামও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৬০ ডলারের কাছাকাছি নেমে এসেছে।

এই পরিস্থিতিতে, মার্কিন ডলারের (USD) মানও কমে গেছে, যা বাণিজ্য যুদ্ধের একটি সম্ভাব্য ফল হিসেবে দেখা হচ্ছে। সাধারণত, শুল্ক আরোপের ফলে স্থানীয় মুদ্রার মান বাড়ে, কিন্তু এখানে বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে।

এর কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে আমেরিকার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ দীর্ঘদিনের। উভয় দেশই একে অপরের পণ্যের উপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেছে। বর্তমানে, চীন মার্কিন পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে, যা দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও কঠিন করে তুলেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের ফলে বিশ্ব অর্থনীতির উপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এত অল্প সময়ের মধ্যে এতগুলো দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করা বেশ কঠিন। বাণিজ্য চুক্তিগুলো সাধারণত দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এমনকি স্বল্প সময়ের মধ্যে চুক্তিগুলো সম্পন্ন করা গেলেও, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। বিশ্ববাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে, বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে তার প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে, তৈরি পোশাক শিল্পের উপর এর একটি নেতিবাচক প্রভাব আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়া, বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা দেখা দিলে, প্রবাসী আয় কমে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। তাই, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের এই পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং দেশের অর্থনীতির সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *