আতঙ্কে বিশ্ব! বাণিজ্য চুক্তির দৌড়ে ট্রাম্পের কপালে দুশ্চিন্তা?

ট্রাম্পের বাণিজ্য চুক্তি: সময় ফুরিয়ে আসছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে উদ্বেগের ছায়া।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার মেয়াদের শুরুতে বাণিজ্যকে একটি প্রধান ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। যদিও তিনি কিছু ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছেন, তবে এখন তার হাতে সময় খুবই কম।

একাধিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের সময়সীমা দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।

আসলে, একশোর বেশি বাণিজ্য চুক্তি এখনো ঝুলে রয়েছে। বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত স্থগিত করার পর, ট্রাম্পের লক্ষ্য ছিল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তিগুলোর মাধ্যমে বিদেশি বাজারে মার্কিন ব্যবসার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতকে শক্তিশালী করা।

এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তার হাতে সময় ছিল ৯ জুলাই পর্যন্ত। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি উল্লেখযোগ্য কোনো চুক্তি করতে পারেননি।

কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনে ট্রাম্প এবং অন্যান্য বিশ্বনেতাদের আরও কিছু চুক্তি স্বাক্ষরের প্রত্যাশা ছিল। এমনটা হলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি মন্দা এড়াতে পারবে বলে ধারণা করা হতো।

কিন্তু ট্রাম্পের আকস্মিক প্রস্থান সেই সম্ভাবনাকে দুর্বল করে দেয়। তিনি ইসরাইল-ইরান সংঘাতের কারণে সম্মেলন ত্যাগ করেন, ফলে জটিল বাণিজ্য বিষয়ক আলোচনাগুলোও থমকে যায়।

বর্তমানে, ট্রাম্পের হাতে এই চুক্তিগুলো সম্পন্ন করার জন্য মাত্র কয়েক সপ্তাহ সময় রয়েছে। একই সাথে, মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক সংঘাতের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড ল্যাটনিক সম্প্রতি জানিয়েছিলেন যে, খুব শীঘ্রই নতুন বাণিজ্য চুক্তিগুলো আসতে শুরু করবে। কিন্তু সেই পূর্বাভাস এখনো পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।

ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে প্রায় ১৮টি দেশের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে।

এই চুক্তিগুলো কেন এখনো সম্পন্ন হয়নি? ল্যাটনিকের মতে, ট্রাম্প তাড়াহুড়ো করতে রাজি নন। তিনি এমন চুক্তি করতে চান যা আমেরিকান ব্যবসা এবং ভোক্তাদের জন্য উপকারী হবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিদেশি বাজারগুলো খোলা জরুরি, যেখানে শুল্ক এবং অন্যান্য বাধাগুলো মার্কিন কোম্পানিগুলোর প্রবেশাধিকার সীমিত করে।

জি-৭ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তির জন্য ৩০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করেছে। তবে, কানাডার একটি প্রস্তাব, যেখানে ট্রাম্পের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম শুল্ক থেকে অব্যাহতি চেয়ে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল, তাতে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।

জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ট্রাম্পের আলোচনা থেকেও কোনো ফল আসেনি।

এদিকে, ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল জানিয়েছেন, শুল্কের কারণে কিছু পণ্যের দাম এরই মধ্যে বেড়েছে, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম।

তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির কারণে আগামী মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।

পাওয়েল উল্লেখ করেছেন, অনেক কোম্পানি শুল্কের প্রভাব ভোক্তাদের ওপর ফেলবে বলে আশা করছে। ফেডারেল রিজার্ভের পূর্বাভাসে দেখা গেছে, আগামী কয়েক বছরে মূল্যস্ফীতি বাড়বে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে।

একইসঙ্গে বেকারত্বের হারও বাড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুক্তিগুলো সম্পন্ন না হলে তা অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি এবং বিভিন্ন শিল্পের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ট্রাম্পের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, তিনি একবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমরা অনেক টাকা উপার্জন করছি।”

এই পরিস্থিতিতে, বিশ্ব অর্থনীতির দিকে তাকালে দেখা যায়, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে অনিশ্চয়তা বাড়ছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে।

বিশ্ববাজারে শুল্ক বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে, বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে হলে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *