ডলারের বাজারে অস্থিরতা: ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টার টনক নড়ছে না, বাংলাদেশের জন্য কী বার্তা?
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তাতেও যেন কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তাঁর শীর্ষ বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোর। বরং তিনি মনে করেন, এই নীতি ‘শুরুর মাত্র’।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক নিবন্ধে নাভারো বলেছেন, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য হলো—আমেরিকার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চলা ‘অন্যায্য বাণিজ্য’র অবসান ঘটানো। খবর সিএনএন-এর।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের জেরে গত কয়েক দিনে বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। শুধু মার্কিন শেয়ার বাজারেই প্রায় ৫.২ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে, যা আমেরিকার শেয়ার বাজারকে মন্দার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আধুনিক ইতিহাসে এত দ্রুত কোনো প্রেসিডেন্টের আমলে এমনটা ঘটেনি।
নাভারো তাঁর নিবন্ধে লিখেছেন, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর একটি ‘বিলম্বিত পদক্ষেপ’। তাঁর মতে, এই ব্যবস্থা আমেরিকার বিরুদ্ধে ‘চক্রান্ত’ করা হয়েছিল।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) যা করতে পারেনি, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ সেটাই করছে—অন্যান্য দেশকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করছে।
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন যে, আমেরিকা ও অন্যান্য দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক একতরফা। তাঁর মতে, অন্যান্য দেশগুলো তাদের বাজারে মার্কিন পণ্য প্রবেশে বেশি শুল্ক আরোপ করে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র তেমনটা করে না।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে নাভারো জানান, শুধু পণ্য বাণিজ্যে আমেরিকার ঘাটতি ১.২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা রেকর্ড। যদিও পরিষেবা খাতে দেশটির উদ্বৃত্ত প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন ডলার।
তাঁর মতে, এখন আমেরিকার আত্মরক্ষার সময় এসেছে।
এই আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ওপর যথাক্রমে ৩৪ ও ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। অন্যদিকে, ইইউ জানিয়েছে, তারা একটি শক্তিশালী, সংস্কারকৃত, অবাধ ও ন্যায্য বাণিজ্য ব্যবস্থা সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইইউর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা উরসুলা ভন ডার লেয়েন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে এক ফোনালাপে এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের সমালোচনাও করেছেন অনেকে। এমনকি, ট্রাম্পের একনিষ্ঠ সমর্থক এবং বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কও শুল্ক কমানোর পক্ষে মত দিয়েছেন।
মাস্ক মনে করেন, ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্যে ‘শূন্য শুল্ক’ থাকা উচিত।
এদিকে, ট্রাম্পের এই বাণিজ্য নীতির প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা ইইউ-তে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে শুল্কের কারণে বাধার সৃষ্টি হতে পারে।
ফলে, বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা সরাসরি ভোক্তাদের ওপর প্রভাব ফেলবে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এই জটিল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য সতর্ক থাকা জরুরি। অন্য দেশগুলোর বাণিজ্য কৌশল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের রপ্তানি বাড়ানোর পাশাপাশি, আমদানি পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখার দিকেও নজর দিতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন।