ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতিতে নাটকীয় মোড়, উদ্বেগে অর্থনীতিবিদরা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতিতে ঘন ঘন পরিবর্তন বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি, বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার পর, অর্থনীতিবিদরা এই ধরনের নীতিকে ‘ছেলে ঘুম পাড়ানি’ গল্পের মতো আখ্যা দিয়েছেন এবং এর সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এই পরিবর্তনগুলি বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, যার প্রভাব বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের উপরও পড়তে পারে।
গত কয়েক সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন প্রথমে বেশ কিছু পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক বসানোর ঘোষণা করে, যা বিশ্ববাজারে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এর কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন এবং ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করেন।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই ধরনের নীতি প্রায়শই পরিবর্তন হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা দ্বিধাগ্রস্ত হন এবং বাজারের পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই বাণিজ্যনীতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ। তাঁদের আশঙ্কা, এর ফলে ‘স্ট্যাগফ্ল্যাশন’-এর মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে এবং মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে।
এই পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ভোক্তাদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হবে, যা সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলির অসামঞ্জস্যতা এবং ঘন ঘন পরিবর্তনের কারণে অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করতে দ্বিধা বোধ করছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।
চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ দীর্ঘদিনের। ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্ক নীতির কারণে চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে।
ফলে, উভয় দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি আরও কঠিন হয়ে পড়বে। চীন থেকে বিভিন্ন পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক এবং ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দাম বাড়তে পারে। এর প্রভাব বিশ্বজুড়ে সরবরাহ শৃঙ্খলে পড়তে পারে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি চীন থেকে পণ্যের দাম বাড়ে, তবে বাংলাদেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়তে পারে।
এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসতে পারে। বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য নতুন বাজার খুঁজতে হতে পারে অথবা বিদ্যমান চুক্তিগুলোতে পরিবর্তন আসতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উচিত হবে বিশ্ব বাজারের এই অস্থিরতা বিবেচনা করে একটি স্থিতিশীল এবং সুচিন্তিত বাণিজ্যনীতি গ্রহণ করা। দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হলে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক এবং দূরদর্শী হতে হবে।
তথ্য সূত্র: The Guardian