মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি নিয়ে সম্প্রতি মুখ খুলেছেন দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
ট্রাম্পের মতে, এর মাধ্যমে বাণিজ্য যুদ্ধে ‘পূর্ণ বিজয়’ অর্জন করা সম্ভব হবে। তবে তাঁর এই নীতির কারণে আমেরিকার সাধারণ মানুষের ওপর এর কি প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে ইতিমধ্যে উঠেছে প্রশ্ন।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ট্রাম্পের আমলে চীন সহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক বসানো হয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, গাড়ি এবং মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আসা বিভিন্ন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধি।
এছাড়াও, চীন থেকে আসা পণ্যের ওপর কমপক্ষে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। বর্তমানে, এই শুল্কের হার বিবেচনায় নিলে, আমেরিকার গড় আমদানি শুল্কের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২.৮ শতাংশ।
যা উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্কের এই উচ্চ হারের কারণে অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
এর ফলে, ব্যবসায়ীরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপদে। বিশেষ করে যারা পণ্য আমদানি ও রপ্তানির সঙ্গে জড়িত, তাঁরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, অনেক ব্যবসায়ী হয় পণ্যের দাম দ্বিগুণ করে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন, না হয় বিক্রি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
এতে করে বাজারে পণ্যের সরবরাহ কমে যেতে পারে এবং ভোক্তাদের জন্য জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়তে পারে।
আমেরিকার ব্যবসায়ীরা তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। ফেডারেল রিজার্ভের একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, ব্যবসায়ীরা নতুন করে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছেন।
রিপোর্টে ‘অনিশ্চয়তা’ শব্দটি ৮১ বার ব্যবহার করা হয়েছে, যা একটি রেকর্ড।
ট্রাম্প অবশ্য মনে করেন, উচ্চ শুল্ক আমেরিকার জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে। তাঁর দাবি, এর ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় আমেরিকায় উৎপাদন শুরু করবে, যা কর্মসংস্থান বাড়াবে এবং বিনিয়োগও বাড়বে।
যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই ধারণাটি বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ এবং কারখানার নির্মাণ খরচ বৃদ্ধি পাওয়া সহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
ট্রাম্পের মতে, এই শুল্কের মাধ্যমে আমেরিকা প্রতিদিন বিলিয়ন ডলার আয় করছে।
তবে সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এই সংখ্যা কয়েকশ’ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া, এই শুল্কের বোঝা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপর গিয়ে পড়ছে, যার ফলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।
এদিকে, ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার চেষ্টা করছেন, যা আমেরিকার জন্য বাণিজ্যকে আরও সহজ করবে।
যদিও, তাঁর প্রস্তাবিত চুক্তিগুলোতেও শুল্কের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই বাণিজ্য নীতি আমেরিকার অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। বাণিজ্য যুদ্ধ বেড়ে গেলে, তা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন