বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য বাণিজ্যনীতি: আমেরিকার জন্য অশনি সংকেত?
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় হলে দেশটির বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য বাণিজ্য শুল্কনীতি এই খাতে কয়েক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে, যা ইতোমধ্যে অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে।
খবর অনুযায়ী, এই শুল্ক নীতি মূলত চীনসহ অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা যন্ত্রাংশ এবং স্বয়ং সম্পূর্ণ গাড়ির দাম বাড়িয়ে দেবে, যা ভোক্তাদের জন্য ইভি’র ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দেবে।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন গাড়ির বাজারের প্রায় ৮ শতাংশ দখল করে আছে ইভি। যদিও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে ইভি কেনার ক্ষেত্রে কর ছাড়ের মতো নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল, যা ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়িয়েছিল।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণ করলে সেই নীতিতে পরিবর্তন আসতে পারে। বর্তমানে, টেসলা যুক্তরাষ্ট্রের ইভি বাজারের প্রায় ৪৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তবে ফোর্ড, শেভ্রোলেট এবং হুন্দাইয়ের মতো অন্যান্য ব্র্যান্ডগুলি বাজারে প্রবেশ করার কারণে টেসলার এই আধিপত্য কমে আসছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইভি’র উৎপাদন খরচ এখনো গ্যাস-চালিত গাড়ির চেয়ে বেশি। উদাহরণস্বরূপ, গত মাসে নতুন গ্যাস-চালিত গাড়ির গড় দাম ছিল প্রায় $48,039, যেখানে একটি ইভি’র গড় দাম ছিল $55,273।
বাণিজ্য শুল্ক যুক্ত হলে এই খরচ আরও বাড়তে পারে, যা ইভি’র জনপ্রিয়তা কমার কারণ হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, শুল্কের কারণে গাড়ির দাম বাড়লে ক্রেতারা পুরোনো গাড়ির দিকে ঝুঁকতে পারে। তবে, পুরোনো গাড়ির বাজারেও খুব বেশি স্বস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
এমন পরিস্থিতিতে, গাড়ি নির্মাতারা তাদের বিনিয়োগ এবং উৎপাদন কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হতে পারে। কারণ, ইভি তৈরি ও বিক্রি করা তাদের জন্য এখনো লাভজনক নয়, যেখানে তারা বড় ও জনপ্রিয় গ্যাস-নির্ভর ট্রাক ও এসইউভি থেকে মুনাফা করে।
ইতোমধ্যে, নির্মাতারা ফেডারেল সরকারের সহায়তা কমার কারণে ইভি তৈরির পরিকল্পনা সীমিত করতে শুরু করেছে। এমনকি, এই শিল্পে চীনের আধিপত্যের কারণে যন্ত্রাংশ এবং কাঁচামালের উচ্চ মূল্যও উদ্বেগের কারণ।
বর্তমানে, জিরো এমিশন ট্রান্সপোর্টেশন অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যালবার্ট গোর বলেছেন, ইভি এবং ব্যাটারি শিল্প নিশ্চিত করতে চাইছে যে আমেরিকান অটো শিল্প বৃদ্ধি পাক।
তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্য অংশীদারদের উপর শুল্ক আরোপ করা হলে, যারা ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কারখানাগুলোতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভবত বাইডেনের ইভি সংক্রান্ত নীতি বাতিল করতে পারে, যার মধ্যে ২০৩৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া গাড়ির ৫০ শতাংশ বৈদ্যুতিক করার লক্ষ্যও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা এবং জাতীয় মহাসড়ক নিরাপত্তা প্রশাসনের (এনএইচটিএসএ) নির্গমন ও জ্বালানি সাশ্রয় সংক্রান্ত নিয়মগুলিও পর্যালোচনার অধীনে আসতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের ইভি শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বাণিজ্য শুল্কের কারণে একদিকে যেমন গাড়ির দাম বাড়বে, তেমনি সরবরাহ শৃঙ্খলেও দেখা দিতে পারে অস্থিরতা।
এই অবস্থায়, শিল্প সংশ্লিষ্টরা নতুন বাণিজ্য নীতির প্রভাব কিভাবে মোকাবেলা করা যায়, সে বিষয়ে কাজ করছেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস