আতঙ্কে যুক্তরাষ্ট্র! অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় খবর!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি এবং প্রস্তাবিত কর সংস্কারের জেরে দেশটির অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চলতি সপ্তাহে প্রকাশিতব্য বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক দেশটির অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির একটা ধারণা দেবে, যা বাংলাদেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আসন্ন অর্থনৈতিক পরিবর্তনের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। একদিকে, বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন করে শুরু হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক এবং অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের মতো স্মার্টফোন প্রস্তুতকারকদের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও পরে ইইউ-এর ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত তিনি স্থগিত করেছেন। অন্যদিকে, মার্কিন কংগ্রেসে ট্রাম্পের কর বিল উত্থাপিত হয়েছে, যা দেশের বাজেট ঘাটতি আরও বাড়াতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, আগামী দিনগুলোতে প্রকাশিতব্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্তের দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্ব। এর মধ্যে রয়েছে ভোক্তার আস্থা সূচক, যা মানুষের অর্থনৈতিক মনোভাবের চিত্র তুলে ধরবে। মে মাসে ভোক্তাদের আস্থা সামান্য বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও এপ্রিল মাসে তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল। এছাড়াও, প্রথম প্রান্তিকের জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদন-এর দ্বিতীয় হিসাব প্রকাশ করা হবে। প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, বছরের প্রথম তিন মাসে জিডিপি ০.৩ শতাংশ হারে হ্রাস পেয়েছে, যা ২০২০ সালের পর সর্বনিম্ন।

ভোক্তা ব্যয় এবং আবাসন খাতের পরিস্থিতিও বিশেষভাবে নজরে রাখা হচ্ছে। শুক্রবার প্রকাশিতব্য এপ্রিল মাসের তথ্য অনুযায়ী, পরিবারগুলোর ব্যয় এবং ফেডারেল রিজার্ভের পছন্দের মূল্যস্ফীতি পরিমাপক সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। মার্চ মাসে ভোক্তারা তাদের কেনাকাটা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছিল, বিশেষ করে গাড়ির মতো পণ্যগুলো, যা ট্রাম্পের শুল্কের কারণে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কায় করা হয়েছিল। আবাসন বাজারের দিকে তাকালে দেখা যায়, সুদের হার বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বাড়ির দাম বেড়ে যাওয়ায় সেখানেও কিছুটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

আবাসন খাতের পরিস্থিতি বিচার করতে গিয়ে দেখা যায়, মার্চ মাসের জন্য এসএন্ডপি গ্লোবাল কোরলজিক কেস-শিলার জাতীয় গৃহমূল্য সূচক প্রকাশ করা হবে। ফেব্রুয়ারিতে বাড়ির দাম বার্ষিক ৩.৯ শতাংশ হারে বেড়েছে। ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ রিয়েলটরস (এনএআর)-এর তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে বাড়ি বিক্রির চুক্তি ৬.১ শতাংশ বেড়েছে, যা গত ডিসেম্বরের পর সর্বোচ্চ। তবে, বন্ড মার্কেটে অস্থিরতার কারণে গত সপ্তাহে বন্ধকী সুদের হার বেড়ে ৬.৮৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের পর সর্বোচ্চ।

ফেডারেল রিজার্ভ বা মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলোর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইছে। তারা সুদের হার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আপাতত কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইছে না। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে তারা বিভিন্ন কর্মকর্তার মন্তব্য এবং বৈঠকের কার্যবিবরণী নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করছে।

মার্কিন অর্থনীতির এই পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ, এর প্রভাব বিশ্ব বাণিজ্য, রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং বৈশ্বিক সুদের হারে পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন শুল্ক নীতি বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানিকে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া, মার্কিন অর্থনীতির মন্দা বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্ব বাজারের সুদের হারের পরিবর্তন বাংলাদেশের ঋণ গ্রহণের খরচও বাড়াতে পারে। তাই, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির দিকে আমাদের বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *