যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতিতে পরিবর্তন আসায় বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে এক ধরনের দ্বিধা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এবং শুল্কের কারণে মার্কিন বিনিয়োগের চিরাচরিত আকর্ষণ কমতে শুরু করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন বাজারের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা দুর্বল হয়ে পড়ছে, যা বিনিয়োগের অন্যতম প্রধান স্থান হিসেবে এতদিন সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা আসারও আশঙ্কা করছেন অনেকে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীরা এখন মার্কিন শেয়ার বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ব্যাংক অফ আমেরিকার এক জরিপে দেখা গেছে, ২০০১ সাল থেকে শুরু হওয়া তথ্য সংগ্রহের পর এই প্রথম এত বেশি সংখ্যক বিনিয়োগকারী মার্কিন শেয়ারহোল্ডিং কমানোর পরিকল্পনা করছেন।
তাদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠত্বের যুগ শেষ হতে চলেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্যনীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা তাদের সম্পদ বরাদ্দের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন।
এমনকি পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, এখন সংকট থেকে উত্তরণের আর কোনো পথ নেই।
মার্কিন শেয়ার বাজার দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগের আদর্শ স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি ভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ, এস এন্ড পি ৫০০ (S&P 500)-সূচক চলতি বছরে ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে এবং সম্ভবত এটি ২০২২ সালের পর থেকে সবচেয়ে খারাপ মাস অতিবাহিত করতে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তিনটি প্রধান কারণে বিনিয়োগকারীরা এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের দিকে আগের মতো ঝুঁকছেন না। প্রথমত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (Artificial Intelligence)-এর দৌড়ে যুক্তরাষ্ট্রের একচেটিয়া আধিপত্যের ধারণা বদলে দিয়েছে ‘ডিপসিক’ (DeepSeek)-এর মতো কম খরচের প্রযুক্তি।
দ্বিতীয়ত, ইউক্রেনকে কম সমর্থন দেয়ার মার্কিন নীতির কারণে জার্মানির প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ইউরোপে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করেছে। তৃতীয় কারণটি হলো ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের নীতি, যা বিনিয়োগকারীদের অন্য বাজারগুলোতে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির এই পরিবর্তন বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি উদ্বেগের কারণ। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা আসতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে, অনেক বিনিয়োগকারী এখন তাদের পোর্টফোলিওকে স্থিতিশীল রাখতে ইউরোপ ও চীনের বাজারে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছেন। চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতিও এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়িয়েছে।
তবে, এই পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের জন্য কিছু সুযোগ তৈরি হতে পারে। যদি মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দা আসে, তবে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।
আবার, বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগের নতুন গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশের সম্ভাবনাও বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে, বাংলাদেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারবে।
সবকিছু বিবেচনা করে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগের ধারা পাল্টে যাচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কিছু প্রভাব পড়তে পারে। তাই, এই পরিবর্তনের দিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিত।
তথ্য সূত্র: সিএনএন