ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বাণিজ্য যুদ্ধের সুর তুলেছেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, আমদানি শুল্ক আরও বাড়াতে পারেন এবং তাঁর লক্ষ্য হলো, এক বছরের মধ্যে এই শুল্কের হার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা।
তাঁর এই সিদ্ধান্তের সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে, যার বাইরে নয় বাংলাদেশও।
ট্রাম্পের এই উচ্চ শুল্কের মূল উদ্দেশ্য হলো, মার্কিন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা এবং দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করা। তিনি মনে করেন, উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে আমেরিকায় ব্যবসা করতে বাধ্য করা যাবে, যা কর্মসংস্থান বাড়াবে এবং দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে।
তবে অর্থনীতিবিদরা এই ধারণার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন। তাঁদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপের ফলস্বরূপ ব্যবসার খরচ বাড়বে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
ইতিমধ্যে ট্রাম্প বিভিন্ন পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, চীনের থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রের গড় শুল্কের হার ২২.৮ শতাংশ, যা উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এর ফলস্বরূপ, অন্যান্য দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে আমদানিকারক, রপ্তানিকারক এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উপর, কারণ তাঁদের উচ্চ শুল্ক পরিশোধ করতে হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, ব্যবসায়ীরা ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের বিষয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। অনেক কোম্পানি কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে।
ফেডারেল রিজার্ভের এক প্রতিবেদনেও এমন তথ্য উঠে এসেছে, যেখানে “অনিশ্চয়তা” শব্দটি রেকর্ড ৮১ বার ব্যবহার করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ শুল্কের কারণে বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতাকে প্রভাবিত করবে। ইতোমধ্যে ভোক্তাদের মধ্যে আস্থা কমে গেছে।
কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফা এবং বিক্রয় পূর্বাভাস কমাতে বাধ্য হচ্ছে।
তবে ট্রাম্প বলছেন, তাঁর প্রশাসন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার চেষ্টা করছে, যা বাণিজ্যকে আরও সুষম করবে এবং উৎপাদন আমেরিকায় ফিরিয়ে আনবে। তিনি দাবি করেন, এরই মধ্যে তিনি প্রায় ২০০টি চুক্তি করেছেন।
যদিও এই চুক্তির বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, এই চুক্তিগুলোতেও শুল্কের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কিছু প্রভাব পড়তে পারে। চীন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য অংশীদার।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বাজার। এমন পরিস্থিতিতে, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতিমালার কারণে চীন থেকে আসা পণ্যের দাম বাড়লে, তা বাংলাদেশের বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশ কঠিন হয়ে পড়লে, রপ্তানি খাতেও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। দেশের বাণিজ্য নীতি এমনভাবে সাজাতে হবে, যাতে বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে।
পাশাপাশি, নতুন বাণিজ্য সম্ভাবনা তৈরি করতে এবং বিদ্যমান বাজারগুলো ধরে রাখতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন