যুদ্ধ: ট্রাম্পের চাঞ্চল্যকর সিদ্ধান্ত! ইউক্রেনে অস্ত্র, শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ এবং দেশটির খনিজ সম্পদ ব্যবহারের চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে যা আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

গত সপ্তাহে, ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা হিসেবে প্রায় ৩১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেয়। এর মধ্যে রয়েছে এফ-১৬ যুদ্ধ বিমানের যন্ত্রাংশ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রশিক্ষণ।

এছাড়াও, ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক (Memorandum of Intent) স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেনে বিদ্যমান মূল্যবান ধাতু, তেল ও গ্যাস উত্তোলনের সুযোগ তৈরি হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপগুলো ইঙ্গিত দেয় যে ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতি এখন অর্থনৈতিক স্বার্থ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।

সামরিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রক্রিয়ার অংশীদার হিসেবে দেখতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, এই চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়াকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও সমৃদ্ধ ইউক্রেনকে সমর্থন করে।

ইউক্রেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খনিজ সম্পদ থেকে অর্জিত অর্থের অর্ধেক দেশটির পুনর্গঠন তহবিলে বিনিয়োগ করা হবে।

অন্যদিকে, ইউক্রেন সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর দ্রুত শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তবে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

বরং, যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত আলোচনার পরিবর্তে অন্যান্য বৈশ্বিক বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

সংঘাতের ময়দানে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে লড়াই এখনো চলছে। কিয়েভ এবং পশ্চিমা শহরগুলোতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা অব্যাহত রয়েছে।

ইউক্রেনীয় বাহিনীও পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে। তারা রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জাম ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হানছে। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান কমান্ডার ওলেক্সান্ডার সিরস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়ার প্রধান হামলার লক্ষ্যবস্তুগুলো হলো সুমি ও কুর্স্ক অঞ্চল।

যুদ্ধ পরিস্থিতি বিবেচনায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রতি ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। তবে রাশিয়া এখনো পর্যন্ত সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি।

তারা বরং ৯ মে মস্কোতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয় দিবস উপলক্ষে তিন দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে।

যুদ্ধ বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো কিয়েভের দীর্ঘমেয়াদী শান্তির পথে আসার মানসিকতা যাচাই করা।

এছাড়া, রাশিয়ার সেনারা এখনো পর্যন্ত ১,৬২৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী তাদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তারা রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করতে ড্রোন ব্যবহার করছে।

এছাড়া, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মাধ্যমে রাশিয়ার সামরিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানছে।

যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করতে পারে।

বিশেষ করে, ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ এবং দেশটির খনিজ সম্পদ ব্যবহারের চুক্তি ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্ককে কোন দিকে নিয়ে যায়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *