ট্রাম্পের ইউক্রেন নীতি: ব্যর্থতার সম্ভবনা
ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে, ট্রাম্পের নেওয়া কিছু পদক্ষেপ এবং তাঁর বক্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের নীতি ইউক্রেনকে দুর্বল করতে পারে এবং রাশিয়ার আগ্রাসনকে আরও উৎসাহিত করতে পারে।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই, বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলেও, তা কার্যত টিকছে না। রাশিয়ার পক্ষ থেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোও ভঙ্গ হচ্ছে নিয়মিত। ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে এখনো চলছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও গোলাবর্ষণ।
এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা থেকে সরে আসতে পারে। তা সত্ত্বেও, ট্রাম্প এখনো একটি সমঝোতার ব্যাপারে আশাবাদী।
সম্প্রতি তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, “আশা করি রাশিয়া ও ইউক্রেন এই সপ্তাহে একটি চুক্তিতে পৌঁছাবে।”
তবে, পরিস্থিতি বিবেচনায় ট্রাম্পের এই আশা কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনো তাঁর অবস্থানে অনড়।
তিনি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় চারটি অঞ্চল এবং ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি চান। একইসঙ্গে, তিনি কিয়েভকে ন্যাটোতে যোগ দিতে দিতে রাজি নন এবং ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর আকার সীমিত করতে চান।
এমনকি, তিনি ইউক্রেনে সরকার পরিবর্তনেরও দাবি জানিয়েছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা চললেও, এখন পর্যন্ত কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। বরং, ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়া নিয়ে ট্রাম্পের দ্বিধাগ্রস্ততা দেখা যাচ্ছে।
শুরুতে তিনি অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিলেন, পরে অবশ্য আগের প্রশাসনের দেওয়া কিছু সামরিক সহায়তা পুনরায় চালু করেন।
তবে, নতুন কোনো সহায়তা প্যাকেজ দিতে তিনি এখনো রাজি নন।
বর্তমানে, ইউক্রেনের জন্য বরাদ্দকৃত কয়েক বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা এখনো অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কারণে ইউক্রেন খুব শীঘ্রই প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জামের অভাবে পড়তে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া আলোচনার মাধ্যমে সময়ক্ষেপণ করতে চাইছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন মনে করেন, তিনি এখন সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। ট্রাম্প যদি ইউক্রেনকে চাপ দেন, তাহলে কিয়েভ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে।
কিন্তু ইউক্রেন আত্মসমর্পণ করতে রাজি নয়। তারা স্বাধীনতা রক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় দেশগুলোও রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের পাশে থাকার ব্যাপারে ক্রমশ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। তারা বুঝতে পারছে যে, ইউক্রেনকে হারালে তাদেরও একই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।
এমন পরিস্থিতিতে, ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প যদি তাঁর নীতি পরিবর্তন না করেন, তাহলে ইতিহাসে তাঁর নাম একজন দুর্বল নেতা হিসেবে চিহ্নিত হবে। যিনি শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছেন এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা