ইউক্রেন-রাশিয়া শান্তি আলোচনা: ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকা খুব একটা ফলপ্রসূ নাও হতে পারে। যুক্তরাজ্যের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চার্লস ক্লার্ক এবং ইউরোপীয় ভূ-রাজনীতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ব্রেন্ডন সিমস সম্প্রতি এক আলোচনায় এমন আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের ‘ভীতি প্রদর্শন ও তোষামোদ’-এর কৌশল ইউক্রেনে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি আনতে পারবে না। তারা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, ট্রাম্প অতীতে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গেও একই ধরনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ক্লার্কের মতে, ট্রাম্প সম্ভবত একটি ‘বড় মুহূর্ত’ তৈরি করতে চাইছেন, কিন্তু এর ফল ভালো নাও হতে পারে।
আলোচনায় উঠে আসে, ট্রাম্প সম্ভবত ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ক্রিমিয়ার উপর অধিকার ত্যাগ করতে চাপ দিতে পারেন। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইউক্রেন সম্ভবত সরাসরি ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দিতে রাজি হবে না। তারা হয়তো সেখানকার নিয়ন্ত্রণ কার্যত ছেড়ে দিতে পারে, তবে ট্রাম্পের পরিকল্পনায় এই সূক্ষ্ম পার্থক্যটি বিবেচনা করা হয়নি।
অধ্যাপক সিমস আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করে দেয়, তবে ইউরোপের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে ইউরোপকে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দিতে এগিয়ে আসতে হবে। তবে জার্মানির মতো কিছু দেশে এ নিয়ে দ্বিধা দেখা যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করেন, রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা নিয়ে অতিরঞ্জিত ধারণা রয়েছে। ক্লার্ক উল্লেখ করেন, রাশিয়া কিয়েভ দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে এবং কৃষ্ণ সাগরেও তারা তাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেনে রাশিয়ার ভূখণ্ড দখলের গতি কমে গেছে। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে রাশিয়া ১৪৩ বর্গকিলোমিটার (৫৫ বর্গমাইল) ভূমি দখল করেছে, যেখানে ফেব্রুয়ারিতে তারা ১৯১ বর্গকিলোমিটার (৭৫ বর্গমাইল) এবং জানুয়ারিতে ৩২৬ বর্গকিলোমিটার (১২৫ বর্গমাইল) ভূমি দখল করতে পেরেছিল। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার (Institute for the Study of War) একই প্রবণতা লক্ষ্য করেছে।
যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার সেনা ক্ষয়ক্ষতিও ব্যাপক। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রাশিয়ার প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার ৭৯০ জন সেনা নিহত হয়েছে, যা ২০২২ ও ২০২৩ সালের সম্মিলিত ক্ষয়ক্ষতির চেয়েও বেশি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাশিয়ার সেনাদের মনোবল নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ক্লার্কের মতে, সৈন্যদের মধ্যে বিদ্রোহের সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে, যা রাশিয়ার নেতৃত্বের জন্য উদ্বেগের কারণ।
ইউরোপীয় দেশগুলো যদি ইউক্রেনকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে পারে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন না দিলেও ইউক্রেন যুদ্ধে জয়ী হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ইউরোপকে পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইলিংয়ের ভয় কাটিয়ে উঠতে হবে।
অধ্যাপক সিমস বলেন, রাশিয়া শুরু থেকেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিচ্ছিল, কিন্তু ইউক্রেন যখন কিছু ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করে এবং পাল্টা আক্রমণ চালায়, তখনও তারা এই অস্ত্র ব্যবহার করেনি।
আলোচনায় আরও বলা হয়, জার্মানি এখনো পর্যন্ত ইউক্রেনকে ৫০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিতে রাজি হয়নি, যা সম্ভবত রাশিয়ার পারমাণবিক হুমকির কারণেই হয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা