যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন নীতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবর্তন: আন্তর্জাতিক সম্পর্কে নতুন মেরুকরণ?
দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা চলছিল। সম্প্রতি, ট্রাম্পের ইউক্রেন নীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বিশেষ করে ইউক্রেন-রাশিয়া দ্বন্দ্বে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই নতুন পদক্ষেপ কূটনৈতিক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।
ফেব্রুয়ারি মাসে হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের একটি বৈঠকের কথা স্মরণ করা যেতে পারে, যেখানে ট্রাম্প ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতে কার্যত বাধ্য হওয়ার কথা বলেছিলেন। এরপর, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা প্রদান সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। তবে, জুলাই মাসে ন্যাটোর মহাসচিবের সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাতের পর পরিস্থিতি ভিন্ন রূপ নেয়।
এই বৈঠকে ইউক্রেনকে কয়েক বিলিয়ন ডলার মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম, যেমন অত্যাধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করার ঘোষণা আসে। একই সঙ্গে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে কার্যকর হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই পরিবর্তন রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সমর্থন জোগানোর পাশাপাশি, রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান জানান দিচ্ছে। এমন পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো, রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করে আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ করা এবং ইউক্রেনের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।
অতীতে, সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট (আইএসআইএস)-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। রাশিয়ার পক্ষ থেকে প্রায়ই আলোচনার টেবিলে এক ধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো, কিন্তু বাস্তবে তারা প্রায়ই ভিন্ন আচরণ করত।
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে থাকা সিরীয় বাহিনীর কাছাকাছি সময়ে রাশিয়ান বিমান হামলা চালানো হতো।
ইউক্রেন প্রসঙ্গে ফিরে আসলে, ট্রাম্পের এই নতুন নীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিতে পারে। আগে, ট্রাম্পের প্রশাসন ইউক্রেনকে সমর্থন কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল, যা সম্ভবত রাশিয়ার আগ্রাসনকে আরও উৎসাহিত করেছে।
তবে, এখনকার পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিবর্তনের ফলে ইউক্রেন যুদ্ধে একটি নতুন সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা এবং রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে, আলোচনা টেবিলে একটি সমঝোতায় আসার পথ সুগম হতে পারে।
একইসঙ্গে, এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব আরও বাড়াতে সহায়ক হবে।
ট্রাম্পের এই নতুন পদক্ষেপ কতটুকু সফল হবে, তা সময়ই বলবে। তবে, এটি নিশ্চিত যে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান একটি নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে, যা বিশ্ব রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন