মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কি শ্রমিক সংগঠন ভাঙার খেলা শুরু করলেন ট্রাম্প?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিক সংগঠনগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু পদক্ষেপের কারণে এমনটা হচ্ছে, যা দেশটির ফেডারেল কর্মী এবং তাদের ইউনিয়নগুলোর অধিকার খর্ব করতে পারে।

শ্রমিক সংগঠনগুলো মনে করছে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ তাদের জন্য এক বিরাট হুমকি স্বরূপ।

জানা গেছে, ট্রাম্প সম্প্রতি একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার মাধ্যমে ফেডারেল সংস্থাগুলোর প্রায় ১০ লাখ কর্মীর সংঘবদ্ধ দর কষাকষির অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই তালিকায় রয়েছে ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (National Weather Service) এবং নাসা’র (NASA) মতো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তর।

এর আগে, তিনি পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, বিচার ও স্বাস্থ্য বিষয়ক দপ্তরগুলোর শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর বিরুদ্ধেও একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে এমন ঘটনা নজিরবিহীন। দেশটির প্রধান শ্রমিক সংগঠন ‘এএফএল-সিআইও’ (AFL-CIO)-এর প্রেসিডেন্ট লিজ শুলার সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “শ্রমিক আন্দোলনের ওপর এটি সবচেয়ে বড় আঘাত।”

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ফেডারেল কর্মীদের ক্ষেত্রে যা ঘটছে, তা হয়তো কর্পোরেট জগতেও ছড়িয়ে পড়বে। এর ফলে শ্রমিক সংগঠনগুলোর অধিকার আরও সংকুচিত হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিক সংগঠনগুলোর দুর্বল হয়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। বর্তমানে দেশটির মাত্র ১০ শতাংশ কর্মী কোনো না কোনো ইউনিয়নের সদস্য। যেখানে ১৯৮৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ২০ শতাংশ।

কোভিড-১৯ মহামারীর সময় কাজের পরিবেশ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছিল, যা তাদের ইউনিয়নগুলোর প্রতি সমর্থন বাড়ায়। এছাড়া, বর্তমানে চাকরির বাজারে কর্মী সংকট দেখা দেওয়ায় শ্রমিকরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার হচ্ছেন।

এর ফলস্বরূপ, অ্যামাজন (Amazon), স্টারবাকস (Starbucks), অ্যাপল (Apple) এবং ফক্সওয়াগেন-এর (Volkswagen) মতো বড় কোম্পানিগুলোতে নতুন করে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠিত হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ শ্রমিক সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক প্রভাব কমানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। কারণ, শ্রমিক ইউনিয়নগুলো ট্রাম্পের বিভিন্ন নীতির বিরোধিতা করে আসছিল।

ট্রাম্প অবশ্য শ্রমিকদের সমর্থন করেন বলে দাবি করেন এবং শুল্ক আরোপের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে শ্রমিক-বান্ধব নীতি গ্রহণে বাধ্য করতে চান। কিন্তু তার নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ শ্রমিক অধিকারের পরিপন্থী বলেই মনে করা হচ্ছে।

শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতারা ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা মনে করেন, এর মাধ্যমে তারা তাদের অধিকার পুনরুদ্ধার করতে পারবেন। এমনকি, তারা প্রয়োজনে বেসরকারি খাতেও এই লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।

তাদের বক্তব্য, সরকারি ও বেসরকারি খাতের কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে শ্রমিক সংগঠনগুলোর ওপর আক্রমণ করা সহজ, তাহলে তারা ভুল করবে। শ্রমিকরা তাদের অধিকার আদায়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং তাদের সংগঠনগুলো শক্তিশালী হচ্ছে।

অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে। ১৯৮১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের (Air traffic controllers) ধর্মঘটের কারণে তাদের বরখাস্ত করেছিলেন। সেই ঘটনার পর থেকে কোম্পানিগুলো শ্রমিক সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে আরও কঠোর হতে শুরু করে, যা তাদের দুর্বল করে দেয়।

এখন আশঙ্কা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কারণে একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *