অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়া বিষয়ক কিছু আইনের বিরুদ্ধে জোরালো আপত্তি জানিয়েছে অ্যাপল, মেটা, গুগল, অ্যামাজন এবং ইলন মাস্কের এক্স (সাবেক টুইটার)। এই কোম্পানিগুলো চাইছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যেন অস্ট্রেলিয়ার এই ‘জোরপূর্বক চাপ সৃষ্টিকারী ও বৈষম্যমূলক’ আইনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার ও কমিউনিকেশনস ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (CCIA)-এর পক্ষ থেকে এই অভিযোগ জানানো হয়েছে। ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিসের (USTR) অনুরোধের ভিত্তিতে তারা এই প্রতিক্রিয়া জানায়। ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিস (USTR) হল মার্কিন সরকারের একটি বিভাগ, যারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ নীতি তৈরি ও সমন্বয় করে থাকে। এছাড়া অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বিষয়ক আলোচনাও তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
১১ই মার্চ তারিখে, সিসিআইএ-এর বাণিজ্য নীতি ব্যবস্থাপক আমির নসর এক চিঠিতে উল্লেখ করেন যে, ডিজিটাল পণ্যের উপর অস্ট্রেলিয়ার ‘নিউজ মিডিয়া বার্গেইনিং ইনসেন্টিভ’ একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ, যা ডিজিটাল সেবার উপর বৈষম্যমূলক করের শামিল। এই ইনসেন্টিভ মূলত ২০২১ সালের সংবাদ মাধ্যম বিষয়ক একটি আইনের অংশ, যা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে স্থানীয় সংবাদ প্রকাশকদের অর্থ পরিশোধ করতে উৎসাহিত করে। যদি কোনো প্ল্যাটফর্ম সংবাদ প্রকাশকদের সঙ্গে নতুন চুক্তি করে, তবে তারা এই করের বোঝা থেকে মুক্তি পেতে পারে।
আমির নসর চিঠিতে লিখেছেন, “অস্ট্রেলিয়া সরকার কর্তৃক মার্কিন ডিজিটাল পরিষেবা প্রদানকারীদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় এবং তা স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিতরণ করার কারণে মার্কিন কোম্পানিগুলোর প্রায় ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে।”
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার এই ‘নিউজ মিডিয়া বার্গেইনিং ইনসেন্টিভ’-এর মাধ্যমে মূলত প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে অস্ট্রেলীয় মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে ভর্তুকি দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। বর্তমানে, আইনের আওতায় থাকা দুটি কোম্পানি এই চুক্তির কারণে বছরে ২৫০ মিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার পরিশোধ করছে। নসর আরও উল্লেখ করেছেন, অস্ট্রেলীয় সরকারের নতুন ‘ইনসেন্টিভ’ ট্যাক্সের (যা এখনো নির্ধারিত হয়নি) কারণে এই খরচ আরও অনেক বাড়তে পারে।
এছাড়াও, অস্ট্রেলিয়া তাদের অনলাইন ভিডিও সরবরাহকারীদের জন্য নতুন কিছু নিয়ম চালুর প্রস্তাব করেছে। যেখানে তাদের স্থানীয় কনটেন্ট তৈরি ও প্রদর্শনের জন্য অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। কোম্পানিগুলোকে তাদের স্থানীয় ব্যয়ের ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত অস্ট্রেলীয় কনটেন্ট তৈরিতে খরচ করতে হতে পারে। এমন কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে যা মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য বেশ কঠিন হবে। নসর আরও জানান, অস্ট্রেলিয়ার অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং মার্কেট বছরে প্রায় ২.৩ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব তৈরি করে, যার বেশিরভাগ আসে মার্কিন কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে। যদি অস্ট্রেলীয় সরকার এই ২০ শতাংশ ব্যয়ের বিষয়টি কার্যকর করে, তাহলে এই রাজস্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
আমির নসর জোর দিয়ে বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করার সময়, মার্কিন কোম্পানিগুলোর রপ্তানি স্বার্থ, সরবরাহ ব্যবস্থা এবং অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান