মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইউএস স্টিল-এর নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে দেশটির সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। জাপানি কোম্পানি নিপ্পন স্টিল-এর এই কোম্পানিটি কিনে নেওয়ার পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছিল, তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে সেই চুক্তির শর্তে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এই পরিবর্তনের ফলে, হোয়াইট হাউস সরাসরি ইউএস স্টিলের কার্যক্রমে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে।
এই চুক্তির প্রধান দিক হলো, “গোল্ডেন শেয়ার” নামক একটি ব্যবস্থা, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বেশ কিছু ক্ষমতা দেবে। এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের সম্মতি ছাড়া ইউএস স্টিলের সদর দপ্তর পিটসবার্গ থেকে অন্য কোথাও সরানো যাবে না, এমনকি কোম্পানির নাম পরিবর্তন বা উৎপাদন ও কর্মসংস্থান দেশের বাইরে স্থানান্তর করাও সম্ভব হবে না।
কারখানা বন্ধ করা অথবা অন্য কোনো দেশে কোম্পানি পুনর্গঠন করার ক্ষেত্রেও প্রেসিডেন্টের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
এই চুক্তির বিস্তারিত এখনো পুরোপুরিভাবে প্রকাশ করা হয়নি। তবে, বাণিজ্যসচিব হাওয়ার্ড লটনিকা জানান, প্রেসিডেন্টের অনুমোদন ছাড়া ইউএস স্টিলের ১৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগের পরিকল্পনাও পরিবর্তন করা যাবে না।
এই বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে, কারণ এর মধ্যে একটি নতুন ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস তৈরির খরচও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়াতে পারে।
অন্যদিকে, ইউএস স্টিলের শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী ইউনাইটেড স্টিলওয়ার্কার্স ইউনিয়ন (ইউএসডব্লিউ) এই চুক্তির বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। তারা বলছে, চুক্তির শর্তগুলো এখনো পরিষ্কার নয় এবং এর ফলে শ্রমিকদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, আগামী বছর তাদের সঙ্গে কোম্পানির নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে নিপ্পন স্টিলের এই অধিগ্রহণের বিরোধিতা করেছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি এতে সমর্থন দেন। এমন পরিস্থিতিতে, এই চুক্তির শর্তাবলী এবং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশেষ করে, শ্রমিক ইউনিয়ন মনে করছে, সরকারের এই হস্তক্ষেপের ফলে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
বর্তমানে, জো বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই চুক্তির শর্তের কারণে ইউএস স্টিলের ওপর সরকারের প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এর ফলস্বরূপ, ইস্পাত শিল্পে কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ এবং জাতীয় নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলোতে কেমন প্রভাব পড়ে, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস