ভেনেজুয়েলার বিতর্কে ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ বিচারক, সিগন্যাল মামলায় শুনানি!

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একটি নতুন মামলার শুনানি করতে যাচ্ছেন বিচারক জেমস বোয়াসবার্গ। এই বিচারক এর আগেও ট্রাম্পের বিরাগভাজন হয়েছিলেন, যখন তিনি ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের বিতাড়িত করার বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপকে বাধা দিয়েছিলেন।

নতুন এই মামলাটি মূলত সিগন্যাল নামক একটি মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত। অভিযোগ উঠেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা সরকারি রেকর্ড রক্ষার আইন লঙ্ঘন করে এই অ্যাপের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বিষয়ে আলোচনা করেছেন। বিশেষ করে, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের পরিকল্পনা নিয়ে তারা আলোচনা করেছিলেন।

জানা গেছে, ‘দ্য আটলান্টিক’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক-প্রধান জেফরি গোল্ডবার্গ অনিচ্ছাকৃতভাবে এই চ্যাট গ্রুপে যুক্ত হয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেট হেগসেথ ১৫ই মার্চ ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের ওপর হামলার সময়সূচী এবং আরও কিছু বিস্তারিত তথ্য টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে শেয়ার করেছিলেন।

গণমাধ্যম সূত্রে খবর, অত্যন্ত গোপনীয় এই আক্রমণের পরিকল্পনা একটি সাধারণ মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে, সম্ভবত ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে শেয়ার করা হয়েছিল। আর এই বিষয়টি সামনে আসতেই ওয়াশিংটন জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা দলের সদস্যদের বরখাস্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে, হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা ফেডারেল রেকর্ড আইন ভেঙেছেন, কারণ তাঁরা সিগন্যাল চ্যাটে বার্তাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে কোনো পদক্ষেপ নেননি। এই কারণে, আমেরিকান ওভারসাইট নামক একটি বামপন্থী সংস্থা মামলাটি দায়ের করেছে। তারা আদালতের কাছে কর্মকর্তাদের এই কাজকে অবৈধ ঘোষণা করার এবং হেগসেথসহ ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাদের রেকর্ড সংরক্ষণে বাধ্য করার আবেদন জানিয়েছে।

যদিও ট্রাম্প প্রশাসন এই মামলার বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি, তবে কর্মকর্তাদের দাবি, সিগন্যালে কোনো গোপনীয় তথ্য শেয়ার করা হয়নি। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, পেন্টাগন, পররাষ্ট্র দপ্তর এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থায় (সিআইএ) অনুমোদিত একটি অ্যাপ হিসেবেই সিগন্যাল ব্যবহার করা হতো।

আদালতের মুখপাত্র জানিয়েছেন, মামলার শুনানির জন্য বিচারক বোয়াসবার্গকে নির্বাচন করা হয়েছে, যা আদালতের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ।

এদিকে, বিচারক বোয়াসবার্গের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরোধ ক্রমাগত বাড়ছে। বোয়াসবার্গ গত সপ্তাহে বিচার বিভাগের আইনজীবীদেরকে ১৫ই মার্চ এল সালভাদরে বিতাড়িত হওয়া ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন। ট্রাম্প এই বিচারকের অপসারণ চেয়েছেন, যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “বিচারিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলে তাকে অপসারণ করা উচিত নয়।”

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *