ট্রাম্পের ক্ষমতা বিস্তারের চেষ্টা: আদালতে ভেঙে পড়ছে মিথ্যা অভিযোগ!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সহিংসতার চিত্র নিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া তথ্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশটির বিচারকরা। তারা প্রেসিডেন্টের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতার গুরুতর অমিল খুঁজে পেয়েছেন।

বিভিন্ন রাজ্যে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা সহ ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এসব রায় দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আদালতগুলোতে ট্রাম্পের ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়টি বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সামরিক বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে বিচারকরা ভিন্ন রায় দিয়েছেন।

বিচারকদের এই পদক্ষেপকে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিভিন্ন সময়ে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার মাত্রা বাড়িয়ে দেখিয়েছিলেন। বিশেষ করে, তিনি দেশজুড়ে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার একটি চিত্র তুলে ধরেছিলেন, যা তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এবং সামরিক বাহিনী মোতায়েনের কারণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

তবে, বিচারকরা ট্রাম্পের এই দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করেছেন।

গত কয়েক সপ্তাহে, বেশ কয়েকজন বিচারক ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। শিকাগো এবং ওরেগনে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে দেওয়া রায়গুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

বিচারকরা বলেছেন, সেখানকার পরিস্থিতি ট্রাম্পের বর্ণনার মতো ভয়াবহ নয়।

শিকাগোর একটি ঘটনায়, ট্রাম্প শহরটিকে যুদ্ধক্ষেত্রের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন এবং সামরিক কায়দায় ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন যে স্থানীয় পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না।

কিন্তু বিচারক এপ্রিল পেরি বলেছেন, সেখানে কোনো বিদ্রোহের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং, ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সরকারের দেওয়া তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে এর মিল নেই।

অন্যদিকে, ওরেগনে বিচারক কারিন ইমারগুট ট্রাম্পের ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত’ পোর্টল্যান্ডকে ‘সন্ত্রাসীদের’ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার দাবির সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

বিচারক স্বীকার করেছেন যে, সেখানে কিছু সহিংস ঘটনা ঘটেছে, তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছিল।

বিচারক জোর দিয়ে বলেন, প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে সম্মান জানানো উচিত, তবে মাঠের বাস্তবতাকে উপেক্ষা করা যায় না।

আদালতের এমন রায়গুলো ট্রাম্পের দাবির অসত্যতা প্রমাণ করে।

শুধু তাই নয়, বিচারকরা অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়েও ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন। ট্রাম্প প্রায়ই অভিবাসীদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে বর্ণনা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন।

তবে, বিচারকরা এই যুক্তির সঙ্গে একমত হননি। তারা বলেছেন, কোনো দেশের নাগরিকরা অবৈধভাবে প্রবেশ করলে, তাকে ‘অনুপ্রবেশ’ বলা যায় না।

আদালতের এই রায়গুলো প্রমাণ করে যে, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে সীমিত করতে এবং সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো আরও শক্তিশালী হয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *