আতঙ্ক! দক্ষিণ সুদানের ভিসা বাতিল করলেন ট্রাম্প, কারণ জানলে চমকে যাবেন

যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ সুদানের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করেছে, কারণ হিসেবে জানা গেছে, প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত একটি জটিলতা। ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির কড়া অবস্থানের অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে জানান, দক্ষিণ সুদানের সরকার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে ‘পূর্ণ সহযোগিতা’ করেনি। এর ফলস্বরূপ, দেশটির নাগরিকদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। রুবিও এই ঘটনার জন্য দক্ষিণ সুদানের সরকারের উপর দায় চাপিয়েছেন।

আফ্রিকার নবীনতম এই দেশটি বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট সালভা কির এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাচারের অনুগত বাহিনীর মধ্যে নতুন করে সংঘাত শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিলের কারণ হিসেবে জানা যায়, দক্ষিণ সুদানের সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো নাগরিকদের গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। রুবিও বলেন, এই বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত এবং তাই ভিসা বাতিল করা হয়েছে।

বিষয়টি আরও বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে ডেপুটি সেক্রেটারি অফ স্টেট ক্রিস্টোফার ল্যান্ডাউ জানান, দক্ষিণ সুদান তাদের নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত এক ব্যক্তিকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। ওই ব্যক্তি আসলে কঙ্গোর নাগরিক ছিলেন বলে দাবি করা হয়। ল্যান্ডাউয়ের ভাষ্যমতে, ওই ব্যক্তি গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত দক্ষিণ সুদানের দূতাবাস কর্তৃক দক্ষিণ সুদানের নাগরিক হিসেবে শনাক্ত হয়েছিলেন। এমনকি দূতাবাস জরুরি ভ্রমণের জন্য একটি চিঠিও ইস্যু করে, যার ভিত্তিতে ওই ব্যক্তিকে জুবাতে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর দক্ষিণ সুদানের কর্মকর্তারা জানান, তিনি আসলে তাদের দেশের নাগরিক নন।

ল্যান্ডাউ আরও বলেন, কোনো বিদেশি সরকার যদি তাদের দূতাবাস কর্তৃক প্রদত্ত সনাক্তকরণকে প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে সেই পরিস্থিতিতে প্রত্যাবাসন ব্যবস্থা কার্যকর রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দক্ষিণ সুদানের সরকার এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে ২৪ জন দক্ষিণ সুদানের নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে একজনকে দক্ষিণ সুদানের নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকার করা হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন এবং এটিকে ‘গণহারে শাস্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

২০১১ সালে দক্ষিণ সুদান স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকেই দেশটিতে সংঘাত চলছে। ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট কির ও তার ডেপুটি মাচারের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, যা ২০১৮ সালে একটি শান্তি চুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়। তবে এখনো মাঝে মাঝে সেখানে সহিংসতার খবর পাওয়া যায়।

বর্তমানে অনেক দক্ষিণ সুদানী প্রতিবেশী দেশগুলোতে এবং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন। ধারণা করা হয়, ২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রায় এক লাখ দক্ষিণ সুদানী যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতেন। তাদের মধ্যে কতজন ভিসাধারী ছিলেন, আর কতজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

বারাক ওবামার প্রশাসন ২০১১ সালে দক্ষিণ সুদানের প্রায় ১৩৩ জন নাগরিককে বিশেষ সুরক্ষা প্রদান করে। এই সুরক্ষার ফলে তারা যুক্তরাষ্ট্রে কাজ ও বসবাসের অধিকার পান। এরপর জো বাইডেনের প্রশাসন এই সুরক্ষার মেয়াদ ২০২৩ সালে আরও ১৮ মাস বাড়িয়েছে, যা চলতি বছরের মে মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

দক্ষিণ সুদানের বাস্কেটবল দল, যারা আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম সেরা দল হিসেবে পরিচিত, তাদের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। এই ভিসা বাতিলের কারণে তাদের উপরও প্রভাব পড়তে পারে।

দক্ষিণ সুদান তেল সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও এটি আফ্রিকার দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে একটি। ২০১৩-২০১৮ সালের গৃহযুদ্ধে চার লক্ষাধিক মানুষ নিহত হয় এবং প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। এর ফলে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *