যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা নিয়ে ট্রাম্পের নতুন ফন্দি, ভারতীয়দের মাঝে চরম উদ্বেগ!

যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ কর্মী পাঠায় এমন দেশগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান সবার উপরে। সম্প্রতি এইচ-১বি ভিসা ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্তের জেরে উদ্বেগে পড়েছেন ভারতীয় নাগরিক ও প্রযুক্তি শিল্প।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ভারতীয় পেশাদাররা। কারণ এই ভিসার সুবিধাভোগীদের মধ্যে সিংহভাগই ভারতীয়। শুক্রবার এই ঘোষণা আসার পর থেকেই অনেক ভারতীয় নাগরিকের মধ্যে চরম বিভ্রান্তি দেখা যায়। ঘটনার জেরে সান ফ্রান্সিসকো থেকে দুবাইগামী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট প্রায় তিন ঘণ্টা বিমানবন্দরে আটকে ছিল। জানা গেছে, অনেক যাত্রী, বিশেষ করে এইচ-১বি ভিসা আছে এমন যাত্রীরা, দেশে ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলছে, এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো ভিসার অপব্যবহার কমানো এবং আমেরিকান কর্মীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা। এইচ-১বি ভিসা মূলত একটি বিশেষ ধরনের ভিসা, যা সাধারণত তিন বছর মেয়াদের জন্য দেওয়া হয় এবং পরে আরও তিন বছরের জন্য এটি নবায়ন করা যায়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই ভিসার মাধ্যমে মার্কিন কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এবং আরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়।

কিন্তু ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্তের কারণে ভারতীয় পেশাদারদের ওপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, প্রতি বছর এই ভিসার জন্য সবচেয়ে বেশি আবেদন করেন ভারতীয় নাগরিকরা। ফলে, কয়েক লক্ষ মানুষের কর্মজীবনের ওপর এর প্রভাব পড়বে এবং অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক মডেলও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই ফি বাড়ানোর ফলে পরিবারগুলোর ওপর যে প্রভাব পড়বে, তা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্বেগের কারণ। তারা আশা করছে, মার্কিন কর্তৃপক্ষ বিষয়টির উপযুক্ত সমাধান করবে।

হোয়াইট হাউস পরে জানায়, এই নতুন ফি শুধুমাত্র নতুন এইচ-১বি ভিসার আবেদনকারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে।

এই এইচ-১বি ভিসা কয়েক দশক ধরে ভারতীয় মেধাবীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পথ খুলে দিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা দীর্ঘমেয়াদে সেখানে কাজ করার সুযোগ পান। এর ফলে দক্ষ ভারতীয় পেশাদাররা যেমন তাদের দক্ষতা দিয়ে অবদান রাখতে পেরেছেন, তেমনিভাবে আমেরিকান উদ্ভাবনেও তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

বর্তমান সময়ের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর দিকে তাকালে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। মাইক্রোসফটের সত্য নাদেলা, অ্যালফাবেটের সুন্দর পিচাই, আইবিএমের অরবিন্দ কৃষ্ণ এবং অ্যাডোবের শান্তনু নারায়ণ—এই শীর্ষ নির্বাহীরা সবাই ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

ভারতের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড সার্ভিসেস কোম্পানিজ (ন্যাসকম) জানিয়েছে, নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে আমেরিকার উদ্ভাবন ব্যবস্থা এবং সামগ্রিক কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ অর্থবছরের জন্য অ্যামাজন সবচেয়ে বেশি এইচ-১বি ভিসা পেয়েছে, যা প্রায় ১০,০০০। দ্বিতীয় স্থানে থাকা টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (টিসিএস) পেয়েছে ৫,৫০০-এর বেশি ভিসা।

নতুন এই ফি অনুযায়ী, শুধুমাত্র অ্যামাজনের জন্য কর্মী নিয়োগের খরচ এক বছরে ১ বিলিয়ন ডলার এবং টিসিএসের জন্য প্রায় ৫৫ কোটি ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলো তাদের কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কৌশল পরিবর্তন করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, তারা হয়তো অফশোরিং এবং অটোমেশন বাড়ানোর দিকে ঝুঁকবে। সেই সঙ্গে মেক্সিকো ও কানাডার মতো ‘নিকটবর্তী’ দেশগুলোতে কর্মী নিয়োগের সম্ভাবনাও বাড়ছে।

এই ভিসা ঘোষণার পাশাপাশি, ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের ওপর অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়িয়েছে। গত মাসে ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়, যা রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করার কারণে নেওয়া হয়েছে বলে হোয়াইট হাউস জানায়।

অর্থনীতিবিদ মাধবী অরোরার মতে, এই নীতি ভারতের জন্য অপ্রত্যাশিত সুযোগ তৈরি করতে পারে। এর মাধ্যমে দক্ষ কর্মীরা হয়তো দেশে ফিরে আসতে উৎসাহিত হবেন।

মুম্বাইয়ের বাসিন্দা অশোক গুপ্তের মতে, “এটা ভারতের চেয়ে আমেরিকার জন্যই বেশি ক্ষতির কারণ হবে। যারা বাইরে গিয়ে এত টাকা দিতে পারবে না, তারা হয়তো তাদের অফিসগুলো এখানেই খুলবে। যখন তারা এখানে কাজ করবে, তখন উন্নয়নশীল ভারত আরও এগিয়ে যাবে।”

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *