যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া কিছু ভোটারের মধ্যে এখন অনুশোচনা দেখা যাচ্ছে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু জরিপে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, ট্রাম্পকে সমর্থন করা ভোটারদের মধ্যে অনেকেই তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন করে ভাবছেন।
ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস অ্যামহার্স্ট-এর একটি জরিপে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া মাত্র ৬৯ শতাংশ ভোটার মনে করেন, তাঁরা সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। যেখানে কমলা হ্যারিসকে ভোট দেওয়া ৭৮ শতাংশ ভোটার এই বিষয়ে একই মত প্রকাশ করেছেন।
এপ্রিল মাসের একটি জরিপে ট্রাম্পের প্রতি ৭৪ শতাংশ ভোটারের একই রকম আত্মবিশ্বাস ছিল। অর্থাৎ, আগের তুলনায় ট্রাম্প সমর্থকদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।
যদিও এর মানে এই নয় যে, ট্রাম্পের বাকি সমর্থকরা সবাই হতাশ। এই জরিপে অংশ নেওয়া ১৯ শতাংশ ভোটার জানিয়েছেন যে, তাঁরা এখনো তাঁদের সিদ্ধান্তের প্রতি ‘আস্থা’ রাখেন, তবে তাঁদের কিছু ‘উদ্বেগ’ রয়েছে।
এছাড়া, প্রায় ১০ শতাংশ ট্রাম্প ভোটার হয় তাঁদের ভোট নিয়ে অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন, না হয় ‘মিশ্র অনুভূতি’র কথা জানিয়েছেন। এমনকি, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ এমনও বলেছেন যে, তাঁরা যদি আবার ভোট দিতে পারতেন, তাহলে অন্য কাউকে ভোট দিতেন অথবা ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকতেন।
এপ্রিল মাসের তুলনায় এই সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।
জরিপে দেখা গেছে, ১৪ শতাংশ ট্রাম্প ভোটার জানিয়েছেন, তাঁরা যদি আবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পেতেন, তাহলে হয়তো হ্যারিসকে ভোট দিতেন (৬%), অন্য কোনো দলের প্রার্থীকে ভোট দিতেন (৫%) অথবা ভোট দিতেনই না (৩%)।
হ্যারিসের ভোটারদের মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ এমনটা জানিয়েছেন।
শুধু এই জরিপই নয়, অন্যান্য তথ্য থেকেও একই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমেছে, যা বিভিন্ন জরিপে প্রতিফলিত হয়েছে। এমনকি, আধুনিক ইতিহাসে ট্রাম্পের প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে পাওয়া জনপ্রিয়তার হার সবচেয়ে কম ছিল।
ট্রাম্পের কিছু নীতিও তাঁর সমর্থকদের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। ইরানের ওপর সামরিক হামলা, ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ এবং মেডিকেইড কাটার মতো বিষয়গুলো নিয়ে অনেক রিপাবলিকানও প্রশ্ন তুলেছেন।
এছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসনের ‘এপস্টাইন ফাইলস’ সংক্রান্ত বিতর্কও তাঁর সমর্থকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে। ওই জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৩৮ শতাংশ ট্রাম্প ভোটার মনে করেন, প্রশাসন এই বিষয়টি ভালোভাবে সামাল দিয়েছে।
৩৩ শতাংশ মনে করেন, প্রশাসন তথ্য গোপন করছে।
এই পরিস্থিতিতে, ট্রাম্পকে সমর্থন করা অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিও তাঁর থেকে দূরত্ব বজায় রাখছেন।
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। সিবিএস নিউজ-ইউগভ-এর একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ছিল ৫৫ শতাংশ, যা গত মাসে কমে দাঁড়িয়েছে ২৮ শতাংশে।
ইয়াহু নিউজ-ইউগভ-এর আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, ১৭ শতাংশ ট্রাম্প ভোটার জানিয়েছেন যে, তাঁরা এমন কাউকে চেনেন যিনি ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার জন্য অনুতপ্ত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কোনো ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর ভুলের কথা স্বীকার করতে চান না। তাই, এই ধরনের প্রশ্ন ভোটারদের আসল মনোভাব জানতে সাহায্য করে।
সব মিলিয়ে, এমনটা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া কিছু ভোটারের মধ্যে তাঁদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে দ্বিধা তৈরি হয়েছে।
এই প্রবণতা ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলে, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন