ট্রাম্প ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মধ্যেকার লড়াই: সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা?
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার উদ্দেশ্যে একটি নতুন পদক্ষেপ নিয়েছেন। এবার তার নিশানায় রয়েছে প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল (Wall Street Journal)।
পত্রিকাটির বিরুদ্ধে তিনি ১০০ কোটি ডলারের মানহানির মামলা করেছেন এবং একইসঙ্গে আসন্ন স্কটল্যান্ড সফরে পত্রিকাটির একজন সাংবাদিককে তার সঙ্গে ভ্রমণ করতেও নিষেধ করেছেন। খবরটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি সূত্রে জানা গেছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ট্রাম্পের সঙ্গে কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টাইনের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৩ সালে এপস্টাইনের জন্মদিনের জন্য তৈরি করা একটি অ্যালবামে ট্রাম্পের নামাঙ্কিত একটি চিঠি ছিল।
ট্রাম্প অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই ঘটনার জের ধরেই ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপ।
হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক তার আসন্ন স্কটল্যান্ড সফরের সময় সাংবাদিকদের দলে থাকতে পারবেন না।
জানা গেছে, ওই সাংবাদিককে ট্রাম্পের টার্নবেরি ও অ্যাবারডিন-এর গলফ কোর্স পরিদর্শনের খবর সংগ্রহের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার উদ্দেশ্যে ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপ নতুন নয়।
অতীতেও তিনি বিভিন্ন সময়ে তার সমালোচক সাংবাদিকদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করেছেন। এমনকি, প্রভাবশালী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব রুপার্ট মার্ডকের মালিকানাধীন কিছু সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও তার সম্পর্ক খারাপ হয়েছে, যদিও অতীতে এই মাধ্যমগুলো ট্রাম্পের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর জন্য ট্রাম্পের এমন কৌশল বেশ পুরনো।
এর আগেও, তিনি সাংবাদিকদের অ্যাক্সেস সীমিত করেছেন এবং সংবাদ সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছেন।
উদাহরণস্বরূপ, মেটা’র (Meta) বিরুদ্ধেও তিনি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, যখন তারা তার সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলো নিষিদ্ধ করেছিল।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো প্রেসিডেন্টের মানহানির মামলা করার অধিকার থাকতে পারে, তবে এই ধরনের পদক্ষেপ সম্ভবত মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করার একটি অপচেষ্টা।
তারা মনে করেন, এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের মধ্যে ভীতি তৈরি করা যেতে পারে, যা তাদের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা থেকে বিরত রাখবে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সাধারণত রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির সংবাদ পরিবেশন করে থাকে, কিন্তু ট্রাম্পের বিষয়ে তারা প্রায়ই নিজস্ব মতামত প্রকাশ করে এসেছে।
তবে মার্ডকের মালিকানাধীন অন্যান্য মিডিয়া, যেমন – ফক্স নিউজ চ্যানেল এবং নিউ ইয়র্ক পোস্ট-এর মতো গণমাধ্যমগুলো ট্রাম্পের প্রতি তুলনামূলকভাবে বেশি সহানুভূতিশীল।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের ফলে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
কেউ কেউ তার সমালোচনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে, আবার অনেকে সম্ভবত কোনো প্রকার বিতর্কের ঝুঁকি নিতে চাইছে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ট্রাম্পের এই ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে কী প্রভাব ফেলবে, তা এখন দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)।