শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের তোপের মুখে ওয়ালমার্ট! অতঃপর…

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী খুচরা বিক্রেতা ওয়ালমার্ট, হোম ডিপো এবং টার্গেট-এর মত কোম্পানিগুলো সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে সৃষ্ট জটিলতার মধ্যে পড়েছে। ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির ফলে পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে কোম্পানিগুলো, কিন্তু এর ফলে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে, এমনটাই আশঙ্কা তাদের।

একইসাথে, ট্রাম্পের রোষানল থেকে বাঁচতেও চাইছে তারা।

জানা গেছে, এই তিনটি বড় চেইন স্টোরের প্রায় ৪০ শতাংশ পণ্য আমদানি করা হয়, যেখানে হোম ডিপো এবং টার্গেটের ক্ষেত্রে এই হার প্রায় ৫০ শতাংশ। শুল্কের কারণে তাদের খরচ বাড়ছে, যার প্রভাব পড়ছে মুনাফাতে।

এই পরিস্থিতিতে তারা হয় সরবরাহকারী বদল করছে, অথবা পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। কেউ কেউ আবার পণ্যের উৎপাদন কমিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।

বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলার ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর মধ্যে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। ওয়ালমার্ট সবার আগে তাদের ত্রৈমাসিক আয়ের হিসাব প্রকাশ করে। তারা সরাসরি জানায় যে শুল্কের কারণে তাদের পণ্যের দাম বাড়বে, যা গ্রাহকদের পকেটকে প্রভাবিত করবে।

এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প সরাসরি ওয়ালমার্টকে এই খরচ ‘বহন করতে’ বলেন। অন্যদিকে, হোম ডিপো এবং টার্গেট তাদের আয়ের হিসাব দেওয়ার সময় দাম বাড়ানো নিয়ে সরাসরি কোনো কথা বলেনি।

বিশ্লেষকদের মতে, কিছু কোম্পানি ট্রাম্পের সমালোচনার ঝুঁকি নিতে বেশি আগ্রহী। কারণ, তারা মনে করে, এই পরিস্থিতিতে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা প্রয়োজন। তবে, সবারই একটা ভয় কাজ করে যে, কোনো কথা বললে ট্রাম্পের প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।

দাম নির্ধারণের বিষয়টি খুবই সংবেদনশীল। ভুল সিদ্ধান্তের কারণে কোম্পানির ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমনকি ব্যবসায়েও ধস নামতে পারে। কারণ, শুল্কের হার সব সময় পরিবর্তন হচ্ছে।

ফলে, দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রেও অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে।

আরেকটি বিষয় হলো, হোয়াইট হাউজ ইতোমধ্যে এই দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্তের ওপর কড়া নজর রাখছে। ট্রাম্প প্রথমে অ্যামাজনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন, যখন শোনা যায় তারা কিছু পণ্যের ওপর শুল্কের অতিরিক্ত খরচ যুক্ত করার কথা ভাবছে।

পরে খেলনা প্রস্তুতকারক ম্যাটেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (CEO) শুল্ক বৃদ্ধির কারণে খেলনার দাম বাড়ানোর ঘোষণার পর ট্রাম্প তাকেও ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন।

ওয়ালমার্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডগ ম্যাকমিলন সম্প্রতি জানান, শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়বে। তবে, এই পরিস্থিতিতেও তারা চেষ্টা করছেন দাম সহনীয় রাখতে।

অন্যদিকে, হোম ডিপো এবং টার্গেট-এর মতো কোম্পানিগুলো ওয়ালমার্টের পথে হাঁটেনি। তারা জানিয়েছে, শুল্কের কারণে তাদের দামে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।

তবে, হোম ডিপো কিছু পণ্যের দাম বাড়াতে পারে, আবার কিছু পণ্যের দাম কমাতে পারে। টার্গেট জানিয়েছে, দাম বাড়ানো তাদের শেষ বিকল্প। তারা সরবরাহকারী পরিবর্তন এবং পণ্যের ধরন পরিবর্তন করে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইছে।

বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে কোম্পানিগুলো এখন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্লেষকদের মতে, সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে কোম্পানিগুলো ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে পারছে না, যা তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *