বদলে গেল হোয়াইট হাউসের দৃশ্যপট! ট্রাম্পের চাঞ্চল্যকর সিদ্ধান্তে তোলপাড়

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মাইক ওয়াল্টজকে। তাঁর জায়গায় এই পদে আপাতত দায়িত্ব পালন করবেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বৃহস্পতিবার এক ঘোষণায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

একইসঙ্গে, ওয়াল্টজকে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

হোয়াইট হাউজের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ওয়াল্টজকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের পাশাপাশি, গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঘটনাও এর কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

মার্চ মাসে, ওয়াল্টজ অনিচ্ছাকৃতভাবে ‘সিগনাল’ নামক একটি মেসেজিং গ্রুপে আটলান্টিক ম্যাগাজিনের সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গকে যুক্ত করেছিলেন। ওই গ্রুপে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সংক্রান্ত সংবেদনশীল তথ্য আদান-প্রদান করা হতো।

ওয়াল্টজের বিদায় নেওয়ার পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে। হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর কাজের সম্পর্ক ভালো ছিল না। বিশেষ করে, ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ সুসি উইলস এবং অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর মতের মিল হচ্ছিল না।

এমনকি, পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক কিছু বিষয়েও ওয়াল্টজের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল।

এদিকে, ওয়াল্টজের অপসারণের পর ডেমোক্র্যাট দলের শীর্ষ নেতা চাক শুমার এই সিদ্ধান্তের স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তিনি মনে করেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথেরও পদত্যাগ করা উচিত।

শুমারের অভিযোগ, রিপাবলিকানরা এমন একজনকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন যিনি এই পদের যোগ্য নন। তাঁর মতে, হেগসেথের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ‘সাইনালগেট’-এর মতো ঘটনা ভবিষ্যতে আরও ঘটতে পারে।

অন্যদিকে, ওয়াল্টজকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরেও কিছুটা “বিস্ময়” দেখা গেছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানতে পারেন।

এই পরিবর্তনের ফলে রুবিও বর্তমানে প্রশাসনের চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভারপ্রাপ্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, ভারপ্রাপ্ত ইউএসএআইডি প্রশাসক এবং জাতীয় আর্কাইভিস্ট।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পদে আসীন ব্যক্তি দেশের নিরাপত্তা বিষয়ক নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, যেমন চীন ও তাইওয়ানের মধ্যেকার সম্পর্ক, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং মিত্রদের সঙ্গে সামরিক পরিকল্পনা প্রণয়নেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

ওয়াল্টজের বিদায়ের ফলে, এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত পরিকল্পনা কিছুটা হলেও পরিবর্তন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও ওয়াল্টজের কিছু প্রস্তাব ছিল, যা তাঁর অপসারণের পর হয়তো আর শোনা যাবে না।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *