ট্রাম্পের যুদ্ধ অবসানের দাবি: বাস্তবতা কতটুকু?
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়শই নিজেকে বিশ্ব শান্তির দূত হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংঘাতে তার ভূমিকার কথা উল্লেখ করে থাকেন এবং দাবি করেন যে তিনি বেশ কয়েকটি যুদ্ধ বন্ধ করেছেন।
সম্প্রতি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রাম্প আবারও একই কথা বলেন, তবে নির্দিষ্ট করে কোনো যুদ্ধের কথা উল্লেখ করেননি।
ট্রাম্পের এই দাবিগুলো কতটা সত্য, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। এসোসিয়েটেড প্রেসের একটি প্রতিবেদনে ট্রাম্পের এমন কিছু দাবির পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং সেগুলোর পেছনের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।
আসুন, সেই সংঘাতগুলো এবং ট্রাম্পের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানি:
১. ইসরায়েল-ইরান:
ট্রাম্পের সময়ে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। যদিও সরাসরি যুদ্ধ হয়নি, তবে উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি হয়, যার ফলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। তবে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটি ছিল একটি অস্থায়ী বিরতি, যা চলমান ‘শীতল যুদ্ধের’ই অংশ।
২. মিশর-ইথিওপিয়া:
নীল নদের ওপর ইথিওপিয়ার গ্র্যান্ড রেনেসাঁ বাঁধ (Grand Ethiopian Renaissance Dam) নিয়ে মিশর, সুদান ও ইথিওপিয়ার মধ্যে বিরোধ দেখা যায়।
ট্রাম্প এই বিষয়ে মিশর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে একটি সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তা সফল হয়নি। যদিও ট্রাম্প দাবি করেছেন যে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছেন, তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশগুলোর মধ্যে এখনো কোনো যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
৩. ভারত-পাকিস্তান:
জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় ভারতীয় পর্যটকদের মৃত্যুর পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে। ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি উভয় দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন।
তবে, ভারত সরকার এই দাবি অস্বীকার করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ভূমিকা থাকলেও, তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
৪. সার্বিয়া-কসোভো:
সার্বিয়া ও কসোভোর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলছে। ট্রাম্প তার মেয়াদে উভয় দেশের মধ্যে একটি চুক্তি করার চেষ্টা করেছিলেন, তবে সেই চুক্তির অনেক কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।
৫. রুয়ান্ডা ও কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র:
কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সহায়তায় রুয়ান্ডা ও কঙ্গোর মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
তবে, বিদ্রোহী গোষ্ঠী এম-২৩ এই চুক্তিতে সরাসরি জড়িত ছিল না, ফলে শান্তি প্রক্রিয়া এখনো সম্পূর্ণ হয়নি।
৬. আর্মেনিয়া-আজারবাইজান:
নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে কয়েক দশক ধরে সংঘাত চলছে। ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দেশ দুটি একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
যদিও উভয় দেশের নেতারা এই চুক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, তবে এটি এখনো চূড়ান্তভাবে স্বাক্ষরিত হয়নি।
৭. কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড:
কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সীমান্তে সংঘর্ষের পর ট্রাম্প উভয় দেশকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে ভূমিকা রাখেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির কারণে দেশ দুটি আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছিল।
উপসংহার:
ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংঘাত নিরসনে তার ভূমিকার কথা দাবি করলেও, বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রেই তার এই দাবি অতিরঞ্জিত। কিছু ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা ছিল, তবে সংঘাতগুলো এখনো পুরোপুরি সমাধান হয়নি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একটি জটিল বিষয়, যেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া সব সময় সহজ হয় না।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস