ট্রাম্প-শি সম্পর্ক: উত্তেজনা নাকি শান্তি? বড় খবর!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে আবারও বাণিজ্য যুদ্ধ? বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার কারণ

বিশ্বের বৃহত্তম দুটি অর্থনীতির দেশ – যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আবারও গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র এবং শি জিনপিংয়ের চীন, উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব শুধু তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বিশ্ব অর্থনীতিতেও এর গভীর প্রভাব পড়তে পারে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যেও রয়েছে উদ্বেগের কারণ।

কিছুদিন আগেও দেশ দুটির মধ্যে শুল্ক কমানো নিয়ে একটি সমঝোতা হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি আবারও পাল্টে গেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন ১লা নভেম্বরের মধ্যে চীনের পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে ১৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর হুমকি দিয়েছে।

শুধু তাই নয়, চীন থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সফটওয়্যার রপ্তানির ওপরও নিয়ন্ত্রণ আরোপের কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র।

অন্যদিকে, চীনও এর প্রতিশোধ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে।

বিষয়টি সহজে মিটিয়ে ফেলার জন্য ট্রাম্প এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর মধ্যে আসন্ন এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে পরিস্থিতি যে কোনো মুহূর্তে আরও খারাপ দিকে মোড় নিতে পারে।

তাহলে, এই উত্তেজনার কারণ কী?

মূলত, চীনের কিছু পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, বিরলminerals (rare earth minerals) রপ্তানির ওপর চীনের বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত।

এই বিরলminerals বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সামগ্রী তৈরিতে অপরিহার্য। চীন সরকার জানিয়েছে, এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো, সামরিক বা সংবেদনশীল খাতে এইসব উপাদানের ব্যবহার সীমিত করা।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও চীনের বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ওপর রপ্তানি-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরও কঠোর করেছে।

এর ফলে, আমেরিকান প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি হওয়া পণ্য বা সফটওয়্যার, যা চীনা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য খুবই দরকারি, সেগুলো রপ্তানিতেও বাধা সৃষ্টি হয়েছে।

চীন সরকার এই পদক্ষেপকে ‘অত্যন্ত বিদ্বেষপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছে।

এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্র চীনা জাহাজগুলোর ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ শুরু করেছে।

চীনও এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তাদের বন্দরে মাশুল বৃদ্ধি করেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার এই বাণিজ্য যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে।

এর ফলে, পণ্যের দাম বৃদ্ধি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটা সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ:

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার এই বাণিজ্য যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে।

চীন বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার। আবার, যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের বড় বাজার।

এই পরিস্থিতিতে, শুল্ক বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য বিধিনিষেধের কারণে বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানি দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, যদি চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি ব্যয় বাড়ে, তবে তা দেশের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেবে, যা বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

আবার, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশে শুল্ক বাধা সৃষ্টি হলে, দেশের রপ্তানি আয় কমে যেতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের উচিত পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং সম্ভাব্য ক্ষতির মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া।

বাণিজ্য সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখতে এবং নতুন বাজার খুঁজে বের করতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *