ইয়েমেন যুদ্ধ: আটলান্টিকে ট্রাম্পের উপদেষ্টারা কী ফাঁস করলেন?

শিরোনাম: ইয়েমেন যুদ্ধ পরিকল্পনা ফাঁস: ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে চালানোব্য সামরিক অভিযানের গোপন তথ্য ফাঁস করার অভিযোগ উঠেছে। এই তথ্য ফাঁস হয় ‘দ্য আটলান্টিক’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক-প্রধান জেফরি গোল্ডবার্গের কাছে, যিনি হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত হন।

জানা যায়, কর্মকর্তাদের একটি টেক্সট মেসেজিং গ্রুপে ভুল করে যুক্ত হয়েছিলেন গোল্ডবার্গ। এই গ্রুপে হামলার বিস্তারিত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল, কোন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হবে, কি ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হবে এবং ঘটনার ক্রম। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এই মেসেজ আদান-প্রদানকে সত্য বলে স্বীকার করেছেন।

তবে, তারা এটিকে ‘গভীর ও চিন্তাশীল নীতিগত সমন্বয়’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন গোল্ডবার্গ সিগন্যাল নামক একটি এনক্রিপ্টেড মেসেজিং সার্ভিসের মাধ্যমে মাইকেল ওয়াল্টজ নামের একজন ব্যক্তির কাছ থেকে সংযোগের অনুরোধ পান। ওয়াল্টজ তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন।

প্রথমে গোল্ডবার্গ নিশ্চিত ছিলেন না যে, এটি আসল ওয়াল্টজ কিনা। তবে, পরে তিনি অনুরোধটি গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ‘হুথি পিসি স্মল গ্রুপ’ নামের একটি মেসেজিং গ্রুপে যুক্ত হন, যেখানে ১৮ জন সদস্য ছিলেন।

গ্রুপের আলোচনায় দেখা যায়, আক্রমণের কয়েক দিন আগে কর্মকর্তারা এই বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা করছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে থাকা একজন কর্মকর্তা আক্রমণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে, অন্য কর্মকর্তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে মত দেন।

২০১৫ সালের ১৫ই মার্চ, হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে, প্রতিরক্ষা বিভাগের তৎকালীন একজন শীর্ষ কর্মকর্তা গোল্ডবার্গকে একটি ‘টিম আপডেট’ পাঠান, যেখানে আক্রমণের বিস্তারিত বিবরণ ছিল।

হামলার পর গোল্ডবার্গ গ্রুপ থেকে বের হয়ে যান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে ঘটনার সত্যতা জানতে চান।

এই ঘটনা নিরাপত্তা লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগের জন্ম দিয়েছে। ডেমোক্র্যাট দলের সদস্যরা এই বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

তাদের মতে, এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। রিপাবলিকান দলের সদস্যরাও দ্রুত ও বিস্তারিত তদন্তের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্মকর্তাদের এই ধরনের গোপনীয় তথ্য আদান-প্রদান সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচরবৃত্তি আইনের লঙ্ঘন। কারণ, গোল্ডবার্গের কাছে এই ধরনের গোপন তথ্য জানার মতো নিরাপত্তা ছাড়পত্র ছিল না।

এই ঘটনার জেরে ইয়েমেনে চালানো হামলায় অন্তত ৫৩ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে শিশুরাও ছিল।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *