যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইতালির ভ্যাটিকানে পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে গিয়ে তারা এই আলোচনায় বসেন।
দুই নেতার মধ্যে আলোচনার একটি ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে তাদের গভীর মনোযোগ দেখা যায়।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এই আলোচনাকে ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। জেলেনস্কি তার এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনাটি ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং ফলপ্রসূ হলে তা ঐতিহাসিক হতে পারে।
উল্লেখ, এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের একটি শীতল সাক্ষাৎ হয়েছিল, যেখানে ইউক্রেনকে দেওয়া মার্কিন সাহায্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প।
এই বৈঠকের আগে, ট্রাম্পের একজন দূত স্টিভ উইটকফ মস্কোতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়।
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন, প্রস্তাবের ‘বেশিরভাগ বিষয়ে’ ঐকমত্য হয়েছে। তিনি কিয়েভ এবং মস্কোর মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন, যা ‘খুব কাছাকাছি’ রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
তবে, শান্তি প্রতিষ্ঠার এই উদ্যোগে বেশ কিছু গুরুতর বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়েছে। বিশেষ করে, রাশিয়া বর্তমানে যে অঞ্চলগুলো দখল করে রেখেছে, সেই বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব অনুযায়ী, রাশিয়াকে তাদের অধিকৃত অঞ্চলগুলো, বিশেষ করে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিমিয়া উপদ্বীপ নিজেদের কাছে রাখতে দেওয়া হতে পারে। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে নেয়।
ইউক্রেন এবং তার মিত্র দেশগুলো এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত নয়, তারা ক্রিমিয়াসহ তাদের সমস্ত ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের পক্ষে।
এদিকে, মস্কোও যে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রস্তাবে রাজি হবে, তেমনটা এখনো নিশ্চিত নয়। শনিবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের বিতাড়িত করা হয়েছে, যা তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল।
যদিও ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ এই দাবি অস্বীকার করেছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিস্তারিত এখনো আলোচনা হয়নি। এর মধ্যে রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা কিভাবে প্রত্যাহার করা হবে এবং ইউক্রেনকে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া হবে, সে বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
অন্যদিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো চলছে। সম্প্রতি, কিয়েভে রাশিয়ার ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় বহু মানুষ হতাহত হয়েছে।
এর আগে, মস্কোর কাছে একটি গাড়িবোমা হামলায় একজন শীর্ষস্থানীয় রুশ জেনারেল নিহত হন। এই ঘটনার জন্য ক্রেমলিন ইউক্রেনকে দায়ী করেছে।
হামলার তীব্রতা দেখে ট্রাম্পও পুতিনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত শান্তি চুক্তি সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান