ট্রাম্পের শুল্ক: যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প পুনরুদ্ধারে কত সময়?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমদানি শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ আরও অনেক বেশি প্রয়োজন হতে পারে।

ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য হলো, বিদেশি পণ্যের উপর উচ্চ হারে শুল্ক বসিয়ে আমেরিকান উৎপাদন শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা। তার যুক্তি হলো, শুল্কের পরিমাণ বাড়লে, কোম্পানিগুলো আমেরিকায় কারখানা স্থাপন করতে উৎসাহিত হবে। এতে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিও শক্তিশালী হবে।

কিন্তু অর্থনীতিবিদ এবং বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমেরিকার উৎপাদন খাতের উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটাতে দীর্ঘ সময় লাগবে—যা ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের সময়সীমার চেয়ে অনেক বেশি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শুল্ক আরোপ দ্রুত করা গেলেও, কারখানা তৈরি করা রাতারাতি সম্ভব নয়। আধুনিক কারখানা তৈরি করতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে এবং এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের প্রয়োজন।

উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো কোম্পানি গাড়ি, ইলেকট্রনিক পণ্য বা কম্পিউটার চিপসের অ্যাসেম্বলিং কারখানা তৈরি করতে চায়, তবে তাদের দীর্ঘ সময় ধরে পরিকল্পনা করতে হবে এবং কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে।

অর্থনীতিবিদ জো ব্রুসেলাস মনে করেন, “উৎপাদন খাতের এই ধরনের পুনর্গঠন কয়েক মাস বা বছরের মধ্যে সম্ভব নয়। এর জন্য কয়েক দশক সময় প্রয়োজন।”

এই বিষয়টি ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ নীতির পথে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ, ব্যবসায়ীদের কেবল আজকের শুল্কের হার জানলেই চলবে না, বরং আগামী কয়েক বছর বা দশকে শুল্কের হার কেমন থাকবে, সে সম্পর্কেও নিশ্চিত হতে হবে।

অন্যথায়, তারা যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা সরানোর জন্য এত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে দ্বিধা বোধ করতে পারেন। কারণ, আমেরিকার শ্রম খরচ সাধারণত অনেক বেশি।

“আমরা যখন অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিই, তখন আমাদের ২০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে হয়। স্বল্প সময়ের জন্য কোনো শুল্ক কাঠামোর উপর ভিত্তি করে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করতে চাই না।

এমনটাই জানান অ্যালকোয়া’র প্রধান নির্বাহী বিল ওপলিংগার।

কিন্তু শুল্ক কত দিন বহাল থাকবে, তা নিয়ে বর্তমানে ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্প যদি তার দ্বিতীয় মেয়াদেও উচ্চ হারে শুল্ক বহাল রাখেন, তারপরও তার উত্তরসূরি একই নীতি অনুসরণ করবেন কিনা, তা বলা কঠিন।

প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক অ্যালান ব্লিন্ডারের মতে, “পরের প্রেসিডেন্ট যদি শুল্ক বাতিল করে দেন, তাহলে কি এমন পরিস্থিতিতে কেউ আমেরিকায় কারখানা তৈরি করতে চাইবে?”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী, হোয়াইট হাউসে একজন ব্যক্তির ক্ষমতায় থাকার নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। তাই, প্রেসিডেন্টের নেওয়া দীর্ঘমেয়াদী নীতিগুলো সবসময় বহাল নাও থাকতে পারে।

তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতকে শক্তিশালী করতে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কাজ চলছে। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র কুশ দেশাই জানিয়েছেন, যদিও লক্ষ্য হলো উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, তবে প্রাথমিকভাবে তারা বিদ্যমান সুবিধাগুলোর পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ করছেন।

এদিকে, কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ট্রাম্পের এই বাণিজ্য নীতির কারণে কৃষকদের ক্ষতির শিকার হতে পারে। কারণ, শুল্কের কারণে তারা তাদের ক্রেতা হারাতে পারেন, কর্মী ছাঁটাই হতে পারে এবং দেউলিয়া হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কিছু সমর্থক মনে করেন, উৎপাদন খাতের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে, তবে এই প্রচেষ্টা জরুরি।

রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে আমেরিকার মানুষ এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রতি কতটুকু ধৈর্য ধরবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিনিয়োগকারীরাও শুল্কের এই উত্থান-পতন নীতিতে হতাশ।

এই অনিশ্চয়তা অর্থনৈতিক মন্দা বা সম্ভাব্য পতনের কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *