ট্রাম্পের শুল্কনীতি: চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে আপনি?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে মার্কিন অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা, যা বিশ্ব অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলছে।

সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাণিজ্য নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চার জন ব্যবসায়ীর মধ্যে একজন তাদের কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা স্থগিত করেছেন। এর ফলে মার্কিন ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা।

বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে সম্প্রতি ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অফ রিচমন্ড ও আটলান্টার যৌথ উদ্যোগে একটি জরিপ চালানো হয়। এতে প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তাদের (CFO) মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে, যা তাদের অর্থনৈতিক প্রত্যাশা কমিয়ে দিয়েছে।

জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ২৫ শতাংশ সিএফও জানিয়েছেন, শুল্কের কারণে তারা ২০২৩ সালের নিয়োগ পরিকল্পনা কাটছাঁট করেছেন। এছাড়া, বাণিজ্য নীতির কারণে চলতি বছরে মূলধন ব্যয়ের পরিকল্পনাও ২৫ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছেন তারা।

এই বিষয়ে ডিউকের ফুকা স্কুল অফ বিজনেসের অধ্যাপক জন গ্রাহাম বলেন, “শুল্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। স্বল্প মেয়াদে এটি একটি বড় ঝুঁকি তৈরি করছে।”

অন্যদিকে, হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করেছে। তাদের মতে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি তার প্রথম মেয়াদে ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটিয়েছিল।

এই জরিপে দেখা গেছে, শুল্ক নিয়ে উদ্বেগের মাঝেও সিএফওদের নিজস্ব কোম্পানির বিষয়ে আশাবাদ তুলনামূলকভাবে কমেনি। তবে কর্পোরেট আমেরিকায় উদ্বেগের তালিকায় বর্তমানে শুল্ক সবার উপরে অবস্থান করছে।

গত বছরের শেষ প্রান্তিকে, যখন সিএফওদের ব্যবসার প্রধান উদ্বেগের কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিল, তখন শুল্ক ছিল নবম স্থানে। কিন্তু বর্তমানে এটি এক নম্বরে চলে এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুল্ক আরোপের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নীতিমালার অংশ। ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন গ্রাহাম বলেন, “শুল্ক আরোপের এই পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের নিজেদের তৈরি করা, কারণ তারা যেভাবে এটি বাস্তবায়ন করেছে, সেটিও উদ্বেগের কারণ।”

ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ককে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপের পক্ষে কথা বলেছেন, যার মধ্যে রয়েছে—অন্যায্য বাণিজ্য কৌশল মোকাবেলা, বিশাল বাজেট ঘাটতি কমানো, উৎপাদন খাতের চাকরি হ্রাস, মার্কিন ডলারের প্রতি হুমকি এবং অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি।

তবে ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়েছেন, সেই সাথে কমেছে ভোক্তাদের আস্থা। ফার্স্ট রেট ব্লাইন্ডসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রায়ান ম্যাসেঞ্জার জানান, শুল্কের কারণে তার ব্যবসার খরচ প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে।

তিনি বলেন, “আমি শুল্ক নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারি না।”

এই পরিস্থিতিতে, ব্যবসায়ীরা কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসছেন। এছাড়া, বিদেশি দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করতে পারে, যা তাদের পণ্যের চাহিদা কমাতে পারে।

এদিকে, কনফারেন্স বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মার্চ মাসে ভোক্তাদের আস্থা কমে গেছে, যা ২০২১ সালের জানুয়ারির পর সর্বনিম্ন।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ভোক্তাদের এই মানসিক পরিবর্তন অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ, মানুষ যদি খরচ করা বন্ধ করে দেয়, তবে তার সরাসরি প্রভাব পড়বে অর্থনীতির ওপর।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রিপাবলিকানদের উচিত শুল্কের বিষয়ে কথা বলা বন্ধ করা এবং দ্রুত কর কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য নীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে, বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য বিভিন্ন সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (RMG) খাতের উপর এর প্রভাব উল্লেখযোগ্য হতে পারে, যা বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *