টুনা কি স্বাস্থ্যকর? পারদের বিপদ!

টুনা মাছ: স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও সচেতনতা

মাছ আমাদের খাদ্য তালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা প্রোটিন এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। টুনা মাছ এই তালিকায় বেশ জনপ্রিয়, তবে এতে পারদের (মার্কারি) উপস্থিতি নিয়ে কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকিও রয়েছে।

তাই টুনা মাছ খাওয়ার আগে কিছু বিষয় জানা জরুরি।

আসলে, পারদ একটি ভারী ধাতু যা পরিবেশের মাধ্যমে মাছের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। টুনা মাছ অন্যান্য ছোট মাছ খেয়ে বাঁচে, এবং এই ছোট মাছগুলোর শরীরেও সামান্য পরিমাণে পারদ থাকতে পারে।

সময়ের সাথে সাথে এই পারদ টুনা মাছের শরীরে জমা হতে থাকে, যা তাদের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। মানুষের শরীরেও যদি অতিরিক্ত পারদ প্রবেশ করে, তবে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

টুনা মাছে পারদের উপস্থিতি স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু উদ্বেগের জন্ম দেয়। পারদের কারণে মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং সূক্ষ্ম motor skills-এর উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

এছাড়া, হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে পারদ। গর্ভাবস্থায় পারদের সংস্পর্শ ভ্রূণের বিকাশে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, গর্ভবতী মহিলা, শিশুদের এবং যারা ঘন ঘন টুনা মাছ খান, তাদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

টুনা মাছ প্রোটিন এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি ভালো উৎস, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে, পারদের ঝুঁকির কারণে এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সাধারণত সপ্তাহে ২-৩ বার, প্রতিবারে ৮৫-১৪০ গ্রাম মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেন। যদি টুনা মাছ খান, তাহলে অবশ্যই পরিমাণটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

টুনা মাছের কিছু প্রকারভেদে পারদের পরিমাণ ভিন্ন হয়। উদাহরণস্বরূপ, স্কিপজ্যাক (Skipjack) বা হালকা টুনার ক্যান-এ (canned light tuna) অন্যান্য ধরনের টুনা মাছের তুলনায় পারদ কম থাকে। তাই, এই ধরনের টুনা বেছে নেওয়া ভালো।

এছাড়া, সাদা টুনা (albacore) বা বড় আকারের টুনা (bigeye tuna) সপ্তাহে একবারের বেশি না খাওয়াই ভালো। সম্ভব হলে, এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।

বাংলাদেশে টুনা মাছ খুব বেশি প্রচলিত না হলেও, যারা খান, তাদের জন্য কিছু পরামর্শ:

  • গর্ভবতী মহিলা, বুকের দুধ খাওয়ানো মা এবং শিশুদের ক্ষেত্রে টুনা মাছ খাওয়ার বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
  • টুনা মাছ খাওয়ার পরিমাণ সীমিত রাখুন এবং মাঝে মাঝে অন্যান্য কম পারদযুক্ত মাছ, যেমন – রুই, কাতলা, অথবা তেলাপিয়া খান। (স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য এবং কম পারদযুক্ত মাছের তালিকা তৈরি করা যেতে পারে)।
  • যদি টুনা খান, তবে স্কিপজ্যাক বা হালকা টুনার ক্যান বেছে নিন।

টুনা মাছ স্বাস্থ্যকর খাবারের একটি অংশ হতে পারে, তবে এর পারদ-সংক্রান্ত ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। সঠিক পরিমাণে টুনা গ্রহণ এবং অন্যান্য কম পারদযুক্ত মাছ নির্বাচন করে আমরা আমাদের স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখতে পারি।

তথ্য সূত্র: Healthline

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *