বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাওয়া তিউনিসিয়ায় প্রেসিডেন্ট কাইস সায়েদ দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছেন। ক্ষমতা গ্রহণের দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এই নিয়ে তৃতীয় প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে দিলেন তিনি।
কামেল মাদ্দৌরিকে সরিয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সারা জাফারানিকে। জানা গেছে, জাফারানি এর আগে দেশটির সরঞ্জাম ও আবাসন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০২৪ সালে স্বল্প সংখ্যক ভোটারের অংশগ্রহণে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই প্রেসিডেন্ট সায়েদ দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক দমন-পীড়নের অভিযোগ উঠেছে, যেখানে বিরোধী দলের অনেক নেতা, ব্যবসায়ী এবং সাংবাদিকদের কারারুদ্ধ করা হয়েছে।
তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্টের মন্ত্রী ও বিচারক বরখাস্ত করার পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে।
বৃহস্পতিবারের এই নিয়োগের ফলে, জাফারানি দুই বছরের কম সময়ে দেশটির তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী হলেন। এছাড়াও, তিনি দেশটির ইতিহাসে দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী।
সম্প্রতি, প্রেসিডেন্ট সায়েদ মন্ত্রীদের কর্মক্ষমতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, অনেক মন্ত্রী প্রত্যাশিত মান পূরণ করতে পারেননি এবং তিউনিসিয়ার জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি।
গত মাসে তিনি অর্থমন্ত্রী সিহেম বোগদিরিকে বরখাস্ত করেন।
প্রেসিডেন্সির ফেসবুক পেজে সম্প্রচারিত এক বৈঠকে সায়েদ জাফারানিকে “সরকারের কার্যক্রম আরও সমন্বিত করতে এবং তিউনিসিয়ার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে বাধাগুলো দূর করতে” আহ্বান জানান।
স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে পরিবহন ও ইউটিলিটিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনসাধারণের পরিষেবা দুর্বল হয়ে যাওয়ায় তিউনিসিয়ার নাগরিকরা অসন্তুষ্ট।
শুক্রবার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে দেওয়া ভাষণে সায়েদ বলেন, “অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানে অপরাধী চক্র সক্রিয় রয়েছে। তাদের নির্মূল করতে হবে এবং প্রতিটি কর্মকর্তাকে তাদের পদ ও তাদের অবহেলা বা যোগসাজশের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।”
গত এক বছরে তিউনিসিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১.৪ শতাংশের বেশি হয়নি। দেশটির সরকারি অর্থব্যবস্থা মারাত্মক সংকটের মধ্যে রয়েছে, যার ফলে চিনি, চাল ও কফির মতো প্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
সায়েদ আরও বলেন, “আমরা সকল নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার না আসা পর্যন্ত মুক্তি সংগ্রাম চালিয়ে যাবো… আমরা সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে থাকব।
এছাড়াও, তিউনিসিয়া বর্তমানে একটি অভিবাসন সংকটের মুখোমুখি। আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করছে এবং তারা তিউনিসিয়া হয়ে যায়।
কর্তৃপক্ষের সীমান্ত নিষেধাজ্ঞার কারণে, অভিবাসীরা আমরা ও জেবেনিয়ানার মতো দক্ষিণের শহরগুলোতে তাঁবুতে বসবাস করছে। স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিবাসীদের প্রতি জাতিগত বিদ্বেষমূলক আচরণ ও উস্কানির অভিযোগ এনেছে।
২০২১ সালে সায়েদ নির্বাচিত সংসদ ভেঙে দিয়ে এবং ডিক্রি জারি করে দেশ শাসনের ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এরপর তিনি বিচার বিভাগের ওপরও কর্তৃত্ব স্থাপন করেন।
বিরোধী দল এই পদক্ষেপকে ‘অভ্যুত্থান’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা