লস অ্যাঞ্জেলেসে আটক তিউনিসীয় সঙ্গীতশিল্পী! স্ত্রীর কান্না ছুঁয়েছে হৃদয়

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে বসবাস করা তিউনিসিয়ার এক সঙ্গীতশিল্পীকে আটক করা হয়েছে। তাঁর আমেরিকান স্ত্রী, যিনি পেশায় চিকিৎসক, স্বামীর মুক্তির জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছেন। খবরটি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।

ডাঃ ওয়াফা আল-রশিদ, যিনি লস অ্যাঞ্জেলেস এলাকার একটি হাসপাতালে কর্মরত, তাঁর রোগীদের অনেকেই বর্তমানে অ্যাপয়েন্টমেন্টে আসছেন না। এর কারণ হিসেবে তিনি অভিবাসন কর্মকর্তাদের ধরপাকড়ের আতঙ্ককে দায়ী করেছেন।

ওয়াফার স্বামী, রামি ওথমানে, একজন তিউনিসীয় গায়ক এবং ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতশিল্পী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। রামি গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন এবং সেই সংক্রান্ত কাগজপত্র সবসময় সঙ্গে রাখতেন। জানা যায়, গত কয়েক মাসে, অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তারা দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় কয়েকশ মানুষকে গ্রেফতার করেছেন। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে এবং ন্যাশনাল গার্ড ও মেরিনদের মোতায়েন করা হয়েছে।

১৩ই জুলাই, রামি ওথমানে একটি মুদি দোকানে যাওয়ার সময় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। সে সময় তাকে থামানো হয়। রামি সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কাগজপত্র দেখালেও অভিবাসন কর্মকর্তারা সেগুলোর কোনো তোয়াক্কা করেননি। ওয়াফা জানান, তিনি ফোনে স্বামীর গ্রেফতারের দৃশ্য দেখেছেন। তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং দেখেন, একটি গাড়িতে করে তাঁর স্বামীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

ওয়াফা বলেন, “আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন ছিল সেটি।”

ট্রাম্প প্রশাসনের অবৈধ অভিবাসন বিরোধী অভিযানের শিকার হয়েছেন রামি ওথমানে মতো বৈধভাবে বসবাসকারীরাও। যদিও তাঁর গ্রিন কার্ডের আবেদন প্রক্রিয়াধীন ছিল। ওয়াফা জানান, রামি ২০১৫ সাল থেকে আমেরিকায় বসবাস করছেন এবং তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ২০২০ সালে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা দেশান্তরের নির্দেশ বাতিল করা হয়। তাঁদের বিয়ে হয় মার্চ মাসে এবং তাঁরা সঙ্গে সঙ্গেই গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করেন।

আটকের পর রামিকে লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়। ওয়াফা জানান, সেখানে কোনো বিছানা, বালিশ, কম্বল, সাবান, টুথব্রাশ বা টুথপেস্ট ছিল না। বাথরুমগুলোও ছিল খোলা।

যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এক বিবৃতিতে রামির ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছে। তবে, ২০২০ সালে দেশান্তরের নির্দেশ বাতিল এবং তাঁর গ্রিন কার্ড আবেদনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তারা হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে।

ওয়াফা আরও জানান, তাঁর স্বামী দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় ক্লাসিক্যাল আরবি সঙ্গীত পরিবেশন করে আসছেন। তাঁদের প্রথম দেখা হয়েছিল একটি রেস্টুরেন্টে, যেখানে রামি গান গাইতেন। ওয়াফা বলেন, “রামি খুবই ভালো মানুষ। তিনি সেখানকার অন্য বন্দীদের তাঁর জামাকাপড় দিয়েছেন এবং বাথরুমের আশেপাশে একটি অস্থায়ী দেয়াল তৈরি করেছিলেন, যাতে অন্যরা তাদের ব্যক্তিগত পরিসর পায়।”

আটকের এক সপ্তাহ পর, রামির সহকর্মী সঙ্গীতশিল্পী, অভিবাসন সমর্থনকারী এবং কর্মীরা ডিটেনশন সেন্টারের বাইরে একটি সমাবেশ করেন। তাঁরা আরবি ক্লাসিক্যাল সঙ্গীত পরিবেশন করেন, যা ভেতরের বন্দীরা শুনতে পান।

ন্যাশনাল ডে লেবারার অর্গানাইজিং নেটওয়ার্কের সহ-নির্বাহী পরিচালক পাবলো আলভারাডো বলেন, “লাতিন সংস্কৃতিতে, গান শোনানো ভালোবাসার একটি কাজ। কিন্তু এই মুহূর্তে, বন্দীদের গান শোনানো প্রতিরোধের একটি অংশ।”

ওয়াফা জানান, তিনি প্রতিদিন স্বামীর ফোন কলের জন্য অপেক্ষা করেন। বর্তমানে রামিকে অ্যারিজোনার একটি ডিটেনশন সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাঁর পায়ে ফোলা দেখা দিয়েছে। ওয়াফা চান, জামিনের মাধ্যমে দ্রুত তাঁর স্বামীকে মুক্ত করা হোক। আগামী মঙ্গলবার তাঁর জামিনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *