কফির কাপে লুকানো ভাগ্য! তুরস্কে চাঞ্চল্যকর কফির অজানা গল্প

শিরোনাম: তুর্কি কফি: পানীয়ের চেয়েও বেশি কিছু, সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

কফি, নামটা শুনলেই যেন একটা আরামের ছোঁয়া লাগে। আর এই কফি যদি হয় তুর্কি কফি, তাহলে তো কথাই নেই! শুধু একটি পানীয় হিসেবে এর পরিচয় দেওয়াটা খুবই কম বলা হবে।

এটি একটি সংস্কৃতি, একটি ঐতিহ্য, যা তুরস্কের মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। যুগ যুগ ধরে চলা এই কফি-সংস্কৃতি আজও বিশ্বজুড়ে মানুষকে আকর্ষণ করে।

তুর্কি কফির ইতিহাস বেশ পুরোনো। ধারণা করা হয়, পঞ্চদশ শতকে ইয়েমেন থেকে এর উত্পত্তি। এরপর ধীরে ধীরে অটোমান সাম্রাজ্যে এর বিস্তার ঘটে।

সুলতান সুলেমানের শাসনামলে (যিনি পশ্চিমা বিশ্বে ‘Magnificent’ নামে পরিচিত) কফি তুরস্কের সংস্কৃতিতে প্রবেশ করে এবং দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৫৩৯ সালে, অটোমান নৌবাহিনীর প্রধান খাইরুদ্দিন বার্বারোসা একটি ‘কফি ঘর’ তৈরি করেন, যা ছিল এই পানীয়ের প্রতি মানুষের ভালোবাসার প্রমাণ।

এরপর ইস্তাম্বুলে ‘ক্যাফে’ বা কফি হাউস তৈরি হতে শুরু করে, যা সামাজিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।

তুর্কি কফি তৈরির প্রক্রিয়াটিও বেশ আকর্ষণীয়। একটি বিশেষ পাত্রে (যেটাকে ‘সেজভে’ বলা হয়) ধীরে ধীরে কফি তৈরি করা হয়। এটি সাধারণ কফির থেকে একটু ভিন্ন, কারণ এতে কফি ফুটিয়ে নেওয়া হয়, যা এর স্বাদকে আরও গভীর করে তোলে।

গরমকালে যেমন আমরা রাস্তার মোড়ে চা এর দোকানে আড্ডা দিতে যাই, তেমনি একসময় এই কফি হাউসগুলো ছিল জ্ঞানচর্চা, রাজনৈতিক আলোচনা এবং বন্ধুত্বের মিলনস্থল।

শুধু পানীয় হিসেবেই নয়, তুর্কি কফি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ‘ট্যাসিওগ্রাফি’ বা কাপের তলার চিহ্ন দেখে ভাগ্য বলার রীতি। কফি খাওয়ার পর কাপ উপুড় করে রাখা হয় এবং ঠান্ডা হওয়ার পর কাপের তলার জমাট কফির আকার দেখে ভবিষ্যৎ বলার চেষ্টা করা হয়।

আমাদের দেশে যেমন অনেকে হাতের রেখা দেখে ভবিষ্যৎ বলেন, তেমনি এটিও সেখানে বেশ জনপ্রিয়।

এই কফি সংস্কৃতি শুধু তুরস্কে সীমাবদ্ধ নয়। এটি এখন সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমানে, অনেক তুর্কি কফি বিশেষজ্ঞ এই ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে কাজ করছেন।

নিউইয়র্ক এবং লন্ডনের মতো শহরগুলোতেও এখন তুর্কি কফির কর্মশালা ও কফি হাউস দেখা যায়, যেখানে ঐতিহ্যবাহী উপায়ে কফি পরিবেশন করা হয়।

বাংলাদেশেও কফির কদর বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। বর্তমানে, বিভিন্ন কফি শপে নানা ধরনের কফি পাওয়া যায়।

তবে, তুরস্কের এই বিশেষ কফি এখনো আমাদের দেশে খুব একটা পরিচিত নয়। হয়তো ভবিষ্যতে, আমাদের দেশের কফিপ্রেমীরাও এই আকর্ষণীয় সংস্কৃতিটির সঙ্গে পরিচিত হবে এবং এর স্বাদ গ্রহণ করবে।

যদি কখনও তুরস্ক ভ্রমণে যান, তাহলে অবশ্যই ঐতিহ্যবাহী উপায়ে তৈরি করা তুর্কি কফির স্বাদ নিতে ভুলবেন না। সাথে সেখানকার সংস্কৃতি ও আতিথেয়তা উপভোগ করতে পারেন, যা হয়তো আপনার ভ্রমণকে আরও আনন্দময় করে তুলবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *