তুরস্কে বিরোধী দলের প্রভাবশালী নেতাকে কারারুদ্ধ করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ, সাংবাদিকসহ আটক ১,৪০০ জনের বেশি।
তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলের মেয়র, যিনি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত, তাকে দুর্নীতির অভিযোগে কারারুদ্ধ করার জেরে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষের ধরপাকড়ে এরই মধ্যে এক হাজার চারশতের বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও।
ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে, একরাম ইমামোগলু ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। গত বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তুরস্কের বিরোধী দল ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করাটা প্রেসিডেন্ট এরদোগানের কর্তৃত্ববাদী শাসনের একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত।
বিক্ষোভ দমনের উদ্দেশ্যে, ইস্তাম্বুলের গভর্নর অফিস বিক্ষোভ প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং কিছু রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়ারলিকায়া জানিয়েছেন, গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া সরকার-বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অভিযোগে এ পর্যন্ত ১,৪১৮ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯৭৯ জনকে এখনো হেফাজতে রাখা হয়েছে এবং মঙ্গলবার পর্যন্ত ৪৮৭ জনকে আদালতে তোলা হবে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির একজন ফটোসাংবাদিককে বিক্ষোভের খবর সংগ্রহের সময় আটক করা হয়েছে। এএফপি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এই গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে এবং অবিলম্বে ওই সাংবাদিককে মুক্তি দেওয়ার দাবি করা হয়েছে। এএফপির চেয়ারম্যান ফ্যাব্রিস ফ্রাইস তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে লেখা এক চিঠিতে বলেছেন, “আমাদের সাংবাদিক ইয়াসিন আকগুল প্রতিবাদে অংশ নেননি, বরং তিনি একজন সাংবাদিক হিসেবে ঘটনার ছবি তুলছিলেন।
তুরস্কে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা দীর্ঘদিন ধরেই হুমকির মুখে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো বলছে, দেশটির সরকার প্রায়ই সাংবাদিকদের হয়রানি করে থাকে। অনেক সময় তাদের প্রেস কার্ড কেড়ে নেওয়া হয়। এমনকি দেশটির জাতীয় গণমাধ্যমের প্রায় ৯০ শতাংশ সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মার্কিন গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউস তুরস্ককে ইন্টারনেট ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ‘অনুন্নত’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাদের মতে, ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) এমন কিছু আইন তৈরি করেছে যা অনলাইন আলোচনাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং এর মাধ্যমে সেন্সরশিপ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট এরদোগান ২০০৩ সাল থেকে তুরস্কের ক্ষমতায় রয়েছেন। প্রথমে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১৪ সাল থেকে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৭ সালের এক গণভোটে এরদোগানের ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করা হয়, যা ২০২৯ সাল পর্যন্ত তাকে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছে।
তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) শনিবার ইস্তাম্বুলে একটি সমাবেশের আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন