“হ্যামাম”-এর অন্দরমহল: এক ভিন্ন স্বাদের অভিজ্ঞতা।
প্রাচীন সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের এক অপূর্ব নিদর্শন হলো তুরস্কের হ্যামাম, যা শুধু একটি স্নানাগার নয়, বরং এক সামাজিক মিলনস্থলও বটে। যুগ যুগ ধরে, এই হ্যামামগুলি তুরস্কের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে।
গরম জলের ভাপ আর সুগন্ধি মশলার মিশ্রণে এখানে শরীর ও মনের ক্লান্তি দূর হয়, যা এটিকে করে তোলে এক বিশেষ অভিজ্ঞতা।
হ্যামাম আসলে কী?
হ্যামাম হলো এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী বাথ হাউস বা স্নানাগার। এটি সাধারণত তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত থাকে: প্রবেশপথ, উষ্ণ ঘর এবং গরম ঘর।
প্রবেশপথে পোশাক পরিবর্তনের ব্যবস্থা থাকে এবং বিশ্রাম নেওয়ার জন্য একটি স্থানও থাকে। উষ্ণ ঘরটি হালকা গরম থাকে, যেখানে শৌচাগার, কেশ অপসারণের পরিষেবা এবং মার্বেলের বেসিন থাকে।
মূল আকর্ষণ হলো গরম ঘর, যেখানে একটি উঁচু মার্বেলের প্ল্যাটফর্ম (গোবেখ তাশি) থাকে, যার চারপাশে মার্বেলের বেসিনগুলো সাজানো থাকে।
হ্যামামের ইতিহাস
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, হ্যামামের ধারণাটি এসেছে প্রাচীন রোমান ও বাইজেন্টাইন সংস্কৃতি থেকে। পরবর্তীতে, অটোমান সাম্রাজ্যের সময় এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
একসময়, ধনী পরিবারের মহিলারা নিয়মিত হ্যামামে যেতেন, যেখানে তারা সামাজিকতা করতেন এবং নিজেদের সৌন্দর্যচর্চা করতেন। তাদের জন্য আলাদা সরঞ্জাম ছিল, যেমন – অলঙ্কৃত বাটি, রেশমের কাপড়, এবং বিশেষ তোয়ালে।
হ্যামামে কী ঘটে?
হ্যামামে যাওয়ার অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ। প্রথমে পোশাক পরিবর্তন করে, একটি বিশেষ তোয়ালে (পেশতেমাল) দিয়ে শরীর ঢেকে নেওয়া হয়।
তারপর একজন নাতীর (মহিলা পরিচারিকা) তত্ত্বাবধানে শুরু হয় আসল প্রক্রিয়া। প্রথমে হালকা গরম জলে শরীর ধুয়ে নেওয়া হয়।
এরপর গোবেখ তাশিতে শুয়ে, গরম বাষ্পে শরীরকে শিথিল করার সুযোগ মেলে। ১৫ মিনিটের বিশ্রাম শেষে, নাতীর হাতে হওয়া কেশে নামক বিশেষ স্ক্রাবিং-এর মাধ্যমে মৃত কোষ দূর করা হয়।
কেশে তৈরি হয় এক ধরনের বিশেষ স্ক্রাবিং গ্লাভস দিয়ে।
কেশে-এর পর, জলপাই তেল থেকে তৈরি সাবান দিয়ে ফেনা তৈরি করে শরীর ম্যাসাজ করা হয়। এই ম্যাসাজের ফলে ত্বক নমনীয় হয় এবং শরীরে এক স্নিগ্ধতা আসে।
সবশেষে, চুল ধুয়ে নেওয়ার মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়।
হ্যামামের উপকারিতা
হ্যামামে স্নান করা কেবল শরীরকে পরিষ্কার করে না, বরং এর আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। গরম বাষ্পে শরীরকে আরাম দেওয়ার ফলে পেশী শিথিল হয়, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
কেশে স্ক্রাবিং ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যা ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে।
হ্যামামে যাওয়ার আগে কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি। যেমন – শরীরচর্চা বা ওয়াক্সিং-এর পরপরই হ্যামামে যাওয়া উচিত নয়।
সেইসাথে, ভারী খাবার বা অ্যালকোহল এড়িয়ে যাওয়া ভালো, কারণ গরম পরিবেশে এটি অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
আজকের দিনে হ্যামাম
বর্তমানে, ইস্তাম্বুলে অনেক হ্যামাম চালু আছে। এর মধ্যে কিছু ঐতিহাসিক এবং বিলাসবহুল, যেখানে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা স্থান রয়েছে।
এই হ্যামামগুলি সাধারণত রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তাই, আগে থেকে বুকিং করে যাওয়াই ভালো।
হ্যামামে যাওয়া মানে শুধু পরিষ্কার হওয়া নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতাও বটে।
এখানে, আপনি পুরনো দিনের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ছোঁয়া পাবেন, যা আপনার মনকে শান্তি এনে দেবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন