সিরিয়া সংকট: তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনার মূল কারণ!

সিরিয়ার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে তুরস্ক এবং ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। উভয় দেশের সামরিক বাহিনী সিরিয়ায় সক্রিয় থাকায় সম্ভাব্য সংঘাত এড়াতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি সিরিয়ায় ইসরায়েল বহুবার বিমান হামলা চালিয়েছে। দেশটির সামরিক বাহিনী গোলান মালভূমিতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে থাকা একটি নিরাপত্তা অঞ্চলে সেনা মোতায়েন করেছে। তুরস্ক সিরিয়ার একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান সমর্থক। তারা ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানেও সহায়তা করছে।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বুধবার নিশ্চিত করেছেন যে, ইসরায়েলের সঙ্গে কারিগরি পর্যায়ে আলোচনা চলছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দুই আঞ্চলিক শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে সমঝোতা প্রক্রিয়া জরুরি।

বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, উভয় পক্ষ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আলোচনা চালিয়ে যেতে রাজি হয়েছে।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, আজারবাইজানে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিরিয়ায় সামরিক অভিযান নিয়ে সম্ভাব্য সংঘর্ষ বা ভুল বোঝাবুঝি এড়ানোর জন্য একটি যোগাযোগের চ্যানেল তৈরি করার চেষ্টা চলছে। তুরস্কের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়া তৈরির চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তবে আলোচনার বিস্তারিত সময় বা বিষয় সম্পর্কে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।

অন্যদিকে, তুরস্কের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তুরস্ক ও সিরিয়ার যৌথ প্রশিক্ষণের জন্য একটি ঘাঁটি স্থাপনের মূল্যায়ন চলছে। তিনি আরও জানান, এই ধরনের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে পরিচালিত হবে এবং এতে কোনো তৃতীয় দেশকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে না।

সিরিয়ার নতুন নেতৃত্ব ইসরায়েলের জন্য সীমান্ত নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তেল আবিব। একইসঙ্গে, সিরিয়ায় তুরস্কের প্রভাব বিস্তারের বিষয়টিতেও তারা আপত্তি জানাচ্ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মঙ্গলবার মন্তব্য করেছেন, সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক ঘাঁটিগুলো ইসরায়েলের জন্য “বিপদ” ডেকে আনবে।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলের একটি রাজনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, আলোচনার সময় ইসরায়েল স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, সিরিয়ায় বিদেশি বাহিনীর অবস্থানে কোনো পরিবর্তন, বিশেষ করে পালমিরা অঞ্চলে তুরস্কের ঘাঁটি স্থাপন করা হলে, তা “নিয়ম ভাঙা” হিসেবে গণ্য করা হবে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস-এর তথ্য অনুযায়ী, গত ৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সিরিয়ার বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ৫০০ বারের বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে। এছাড়া, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত তারা ৪৩টির বেশি হামলা চালিয়েছে। সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দেশটির “স্থিতিশীলতা” নষ্ট করার অভিযোগ এনেছে।

গাজায় ইসরায়েলের হামলার জেরে তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ইসরায়েলের যুদ্ধ এবং এতে ৫০,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনির নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র সমালোচনা করেছেন।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *