সাইপ্রাস দ্বীপে তুরস্কের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামীকরণের চেষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন তুর্কি-সাইপ্রিয়টরা। শুক্রবার উত্তর সাইপ্রাসের রাজধানী নিকোশিয়ার রাস্তায় নেমে আসে হাজারো মানুষ, তুরস্কের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে নিজেদের ক্ষোভ জানাতে।
বিক্ষোভকারীদের মূল অভিযোগ, তুরস্ক তাদের ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতিকে দুর্বল করে সমাজে রাজনৈতিক ইসলামের প্রভাব বাড়াতে চাইছে।
বিক্ষোভকারীরা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে ‘এটা হতে দেওয়া হবে না’ এবং ‘সাইপ্রাস ধর্মনিরপেক্ষ থাকবে’ স্লোগান দেয়। তাদের প্রতিবাদ ছিল মূলত তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল, একে পার্টির (AKP) নীতির বিরুদ্ধে।
তুর্কি-সাইপ্রিয়ট শিক্ষকরা মনে করেন, তুরস্ক সরকার তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছে, যা সমাজের ‘ইসলামীকরণ’-এর একটি অংশ। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে তারা তুর্কি-সাইপ্রিয়ট সমাজকে তুরস্কের রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী করতে চাইছে।
বিক্ষোভের সূত্রপাত হয় যখন তুরস্কপন্থী কর্তৃপক্ষ হাই স্কুলগুলোতে মেয়েদের হিজাব পরার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। শিক্ষক সংগঠন, রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য বামপন্থী গোষ্ঠী এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানায়।
তারা এটিকে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করে। প্রতিবাদকারীরা মনে করেন, এটি তুরস্কের ক্ষমতাসীন দলের একটি কৌশল, যার মাধ্যমে তারা তুর্কি-সাইপ্রিয়ট সমাজে রাজনৈতিক ইসলামের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
১৯৭৪ সালে গ্রিসের সমর্থনে অভ্যুত্থানের পর তুরস্ক সাইপ্রাস আক্রমণ করে। বর্তমানে, দ্বীপটি দুটি অংশে বিভক্ত: একটি অংশে গ্রিক-সাইপ্রিয়ট সরকার এবং অন্য অংশে তুর্কি-সাইপ্রিয়টরা বাস করে, যাদের স্বাধীনতাকে শুধু তুরস্কই স্বীকৃতি দেয়।
এই পরিস্থিতিতে, বিক্ষোভকারীরা মনে করে, তুরস্ক তাদের সমাজের উপর প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে, যা তাদের সংস্কৃতি ও স্বকীয়তার জন্য হুমকি স্বরূপ।
বিক্ষোভের দিন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের উত্তর সাইপ্রাস পরিদর্শনের কথা ছিল। এরদোয়ান এই বিক্ষোভকারীদের প্রকাশ্যে তিরস্কার করারও ঘোষণা দেন।
বিক্ষোভের অন্যতম সংগঠক এবং তুর্কি-সাইপ্রিয়ট সেকেন্ডারি এডুকেশন টিচার্স ইউনিয়নের (KTOEÖS) প্রেসিডেন্ট এলমা আইলেম বলেন, হিজাব পরার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত সমাজের উপর ‘প্রভাব বিস্তারের’ একটি অংশ। তিনি আরও বলেন, এই পদক্ষেপ তুরস্কের ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক ইসলামকে গভীর করার প্রচেষ্টার ফল।
এদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সাইপ্রাস বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে মারিয়া অ্যাঞ্জেলা হোলগুইন কুয়েলারকে নিয়োগ করেছেন। তাঁর প্রধান কাজ হবে, ২০১৭ সাল থেকে স্থগিত হয়ে যাওয়া শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করার উপায় খুঁজে বের করা।
এলমা আইলেম জানিয়েছেন, তারা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন এবং তাঁদের সংগ্রাম দীর্ঘমেয়াদী হবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস