যুক্তরাষ্ট্রের একটি ডিটেনশন সেন্টারে আটকের শিকার হওয়া তুর্কি ছাত্রী রুমিয়া ওজতুর্ককে নিয়ে বর্তমানে আলোচনা চলছে। তাঁর আইনজীবীরা বলছেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতার কণ্ঠরোধ করার উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই তাঁকে আটক করা হয়েছিল।
গত মার্চ মাসের ২৫ তারিখে ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে আটকের পর রুমিয়ার ছাত্র ভিসা বাতিল করে লুইসিয়ানার একটি ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয়।
তুফ্টস ইউনিভার্সিটির এই পিএইচডি শিক্ষার্থীর আটকের কারণ হিসেবে জানা যায়, তিনি তাঁর ছাত্র পত্রিকার জন্য ইসরায়েল কর্তৃক গাজায় চালানো যুদ্ধকে ‘গণহত্যা’ অ্যাখ্যা দিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। এই নিবন্ধের জের ধরেই মূলত তাঁকে নিশানা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগের শুনানি চলছে।
আটকের পর প্রায় ছয় সপ্তাহের বেশি সময় রুমিয়াকে ডিটেনশন সেন্টারে কাটাতে হয়েছে। তাঁর আইনজীবী জানিয়েছেন, আটকের সময় রুমিয়াকে কোনো ধরনের নোটিশ দেওয়া হয়নি এবং আটকের পর এক দিনের বেশি সময় পর্যন্ত তিনি আইনজীবীর সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেননি।
আদালতে শুনানিতে রুমিয়া তাঁর স্বাস্থ্য পরিস্থিতির অবনতি সম্পর্কে জানান। ডিটেনশন সেন্টারে থাকার সময় তিনি গুরুতর অ্যাজমা অ্যাটাকের শিকার হয়েছিলেন।
তবে, মুক্তির পর রুমিয়া জানিয়েছেন, তিনি তাঁর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান এবং শিশুদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নিয়ে তাঁর ডক্টরাল গবেষণা চালিয়ে যাবেন।
বিচারক উইলিয়াম সেশনস রুমিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন। তিনি জানান, রুমিয়ার দেশত্যাগের কোনো সম্ভাবনা নেই এবং তিনি জনস্বাস্থ্যের জন্য কোনো হুমকি নন।
বিচারক আরও উল্লেখ করেন, রুমিয়ার অবৈধ আটকের অভিযোগের কারণে তাঁর বাকস্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে কিনা, সেই বিষয়ে গুরুতর সাংবিধানিক প্রশ্ন উঠেছে।
এই ঘটনার মাধ্যমে মূলত ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে নেওয়া একটি সাধারণ পদক্ষেপের প্রতিফলন দেখা যায়। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাঁদের ছাত্র ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
জানা যায়, নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেওয়া মাহমুদ খলিল নামের এক ছাত্রকেও আটক করা হয়েছে। তিনি এখনো আটক অবস্থায় আছেন।
আটকের পর রুমিয়া বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখেন এবং তাঁর মামলা চালিয়ে যাবেন। তাঁর এই বক্তব্যের মাধ্যমে ন্যায়বিচারের প্রতি তাঁর অবিচল থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
রুমিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, তাঁর গ্রেপ্তার এবং ডিটেনশন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে দেওয়া তাঁর মত প্রকাশের অধিকারকে খর্ব করার একটি অপচেষ্টা।
এই ঘটনার সমালোচনা করে কংগ্রেসও সরব হয়েছে। ম্যাসাচুসেটস থেকে নির্বাচিত ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসওম্যান আয়ানা প্রেসলি বলেছেন, রুমিয়াকে ‘অমানবিক পরিবেশে’ রাখা হয়েছিল এবং তাঁর গুরুতর অ্যাজমা অ্যাটাকের চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
এই ঘটনার মাধ্যমে রুমিয়াকে ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা