তুরস্কে ভয়ঙ্কর প্রতিবাদ: রাস্তায় নেমে এল হাজার হাজার মানুষ!

তুরস্কে রাজনৈতিক অস্থিরতা: মেয়র ইমামোগ্লুর গ্রেফতারের জেরে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ

তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগ্লুর গ্রেফতারের প্রতিবাদে দেশটির বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা সরকারের দমননীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছেন। তাদের অভিযোগ, ইমামোগ্লুকে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে আটকাতেই এই গ্রেফতার।

গত বুধবার (১৯ মার্চ) মেয়র ইমামোগ্লুকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। একইসঙ্গে, তার বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিও বাতিল করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, এই পদক্ষেপ গণতন্ত্র, অর্থনীতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মতো বৃহত্তর উদ্বেগের অংশ। ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগ্লু বিরোধী রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী। তার সমর্থকেরা মনে করেন, সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তাকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে চাইছে।

বিক্ষোভের ঢেউ ইতোমধ্যেই তুরস্কের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবারের বিক্ষোভে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন, যা গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সরকার বিরোধী সমাবেশ। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রাস্তায় নামেন এবং বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বিক্ষোভে জড়িতদের কঠোর সমালোচনা করে একে ‘রাস্তার সন্ত্রাস’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, “যারা সরকারি সম্পদ লুট করছে, তাদের পক্ষ নিয়ে রাস্তায় নামা গ্রহণযোগ্য নয়।” এরদোগান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের দায়িত্ব পালনে কোনো বাধা না দেওয়ার আহ্বান জানান।

ইমামোগ্লুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। তুরস্কের সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির (এএ) তথ্য অনুযায়ী, তার বিরুদ্ধে সংগঠিতভাবে জালিয়াতি, ঘুষ গ্রহণ এবং সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও পরে ‘সন্ত্রাস’-এর অভিযোগটি তুলে নেওয়া হয়।

তবে, বিরোধী দল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সরকারের এই পদক্ষেপ গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের চেষ্টা। তারা অবিলম্বে ইমামোগ্লুর মুক্তি ও রাজনৈতিক নিপীড়ন বন্ধের দাবি জানিয়েছে।

বিক্ষোভের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কয়েকশ’ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া জানিয়েছেন, শনিবার রাতের বিক্ষোভে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩২৩ জনকে আটক করা হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বিক্ষোভ তুরস্কের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। আগামী ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে সরকার যদি বিরোধী দলগুলোর ওপর দমন-পীড়ন চালায়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *